ভিডিও গেম কি শুধুই খারাপ জিনিস? জানুন ভিডিও গেমের ভালো এবং খারাপ দিকগুলো

টিউন বিভাগ গেমস
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

পৃথিবীর সব কিছুই যেমন ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে, ভিডিও গেমসেরও কিন্তু ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে। আমাদের অভিভাবকরা অবশ্য ভিডিও গেমের খারাপ দিক ছাড়া ভালো দিক তেমন একটা দেখেন না বৈকি! তবে হ্যাঁ ভিডিও গেমের ভালো দিক রয়েছে। আজ আমি এ বিষয়টি নিয়েই আপনাদের সামনে কিছু কথা বলতে চলে এলাম। আমাদের বাবা-মা এবং গার্জিয়ানরা ভিডিও গেমকে মূলত দেখেন একটি টাইম নস্টকারী বিষয় হিসেবে। আর তাই যখন পড়ার সময় বা কাজের সময় সন্তানরা গেম খেলে তখনই মূলত গার্জিয়ানরা তাদের উপর রেগে যান! কিন্তু উন্নত বিশ্বে ভিডিও গেমকে আরো জঘন্যরূপে ভাবেন গার্জিয়ানরা মনে করেন যে ভায়োলেন্সযুক্ত গেমস খেলে ছেলেমেয়েরা তাদের কিশোর বয়সে সমাজে ক্রাইম জাতীয় কার্যক্রম সংঘটিত করে থাকে। তাদের কথাটাও সম্পূর্ণরূপে ফেলে দেওয়া যায় না। তবে আজ আমি ভিডিও গেমের খারাপ বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলবো। নিজে একজন গেমার হিসেবে আজ ভিডিও গেমসের ভালো দিকগুলো দিয়ে আজকের টিউনটি শুরু করছি। উল্লেখ্য যে, এই ভালো এবং খারাপ দিকগুলো ভিডিও গেমসের উপর গবেষকরা গবেষনা করে উপস্থাপন করেছেন, এগুলো আমার মনগড়া কথা নয়। তো চলুন চলে যাই মূল টিউনে:

ভিডিও গেমের পজিটিভ দিকসমূহ:

যেকোনো ভিডিও গেম খেলার সময় আমাদের ব্রেনের ব্যায়াম হয়। কারণ ভিডিও গেমসগুলোকে বিভিন্ন স্কিলের প্রয়োজন হয় যা আমাদেরকে চিন্তাভাবনা করে বের করতে হয়। তাই ভিডিও গেমকে ব্রেনের ব্যায়াম বা Brain Workout হিসেবেও অনেকেই আখ্যায়িত করে থাকেন। এই ব্রেনের ব্যায়ামগুলো স্কুল কলেজ থেকেও কিন্তু শেখা যায় না! নিচে ভিডিও গেমের পজিটিভ দিকগুলো আমি এক এক করে তুলে ধরলাম:

১) সমস্যার সমাধান ও লজিকের বিকাশ

যখন একজন শিশু লজিক্যাল গেম খেলে (যেমন Angry Birds, Cut The Rope) তখন সে দ্রুত কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় সেটা শিখতে পারে। লজিক্যাল গেমগুলোকে বিভিন্ন পাজল দেওয়া থাকে যেগুলোর সমাধান করতে হলে শিশুর ব্রেন থেকে ক্রিয়েটিভ উপায় বের হয় যা শিশুর মানসিক বিকাশে সাহায্য করে থাকে।

২) হাত ও চোখের সঠিক ব্যবহার

শুটিং গেমসগুলোতে আমাদেরকে একই সাথে অনেকগুলো জিনিসের প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। যেমন একই সাথে আপনি গেমে দৌড়াচ্ছেন এবং গুলি করছেন। আবার অন্যদিকে শত্রুর গুলি কোথা থেকে আসছে সে দিকটাও খেয়াল রাখছেন। শত্রুর গুলি থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন এবং পরবর্তী এট্যাক কোথায় দিবেন সে ব্যাপারে আপনার ব্রেনে আগে থেকেই একটি পরিকল্পনা করে রাখছেন। এই সকল কাজগুলো একত্রে করতে গিয়ে ব্রেনের পাশাপাশি শুটিং গেমসগুলোতে আপনার হাত ও চোখের সঠিক ব্যবহার হয়।

৩) উপাদানের সঠিক ব্যবহার

গেমসগুলোতে গুলি, অস্ত্র বা অনান্য উপাদানগুলো সীমিত আকারে দেওয়া থাকে। একজন গেমারকে এই সীমিত উপাদানগুলো সঠিক ভাবে সঠিক স্থানে কাজে লাগিয়েই গেমে এগিয়ে যেতে হয়। এর মাধ্যমে সে বাস্তব জীবনেও বিভিন্ন সীমিত উপাদানের সঠিক ব্যবহার করা শিখে থাকে।

৪) মাল্টিটাস্কিং

স্ট্রাটেজি ভিডিও গেমসগুলোতে গেমাররা মাল্টিটাস্কিং জিনিস টি শিখতে পারে। ধরুণ গেমে আপনি নিজের শহর বিল্ডআপ করছেন। এখন আপনার একই সাথে শহরের উন্নতির জন্য কাজ করতে হবে এবং একই সাথে শত্রুরা যাতে শহরে আক্রমণ করে লুট করে না নিয়ে যেতে পারে সেজন্য শহরের ডিফেন্স সিস্টেম উন্নতির জন্যেও কাজ করতে হবে। আবার অন্যদিকে একই সাথে উন্নয়নের কাজে জড়িত কর্মীদেরকেও সঠিক সময়ে খাদ্য এবং পারিশ্রমিক দিয়ে খুশিও রাখতে হবে। তাই বলা যায় ভিডিও গেমস আমাদেরকে মাল্টিটাস্কিং করা শেখায়।

৫) দ্রত সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া

অনলাইন গেমসগুলোকে সরাসরি মানুষের সাথে খেলার জন্য প্রায় সময়ই গেমারদেরকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাও আবার সঠিক সিদ্ধান্ত। University of Rochester এর একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে ব্যাটল বা একশন গেমসগুলো থেকে আমাদের ব্রেনে দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া শিখে থাকে এবং বাস্তবিক জীবনে তা প্রয়োগ করতেও উদ্বুদ্ধ করে। ভিডিও গেমস থেকে বাস্তবিক লাইফের আর্মি সৈন্যরা কিংবা ডাক্তাররা ট্রেনিং নিতে পারবেন!

৬) সুক্ষতা

একশন গেমসগুলো আমাদেরকে সুক্ষভাবে সিদ্ধান্ত নিতে শেখায়। যা বাস্তব জীবনে খুবই দরকারী।

৭) পরিকল্পনা

ভিডিও গেমসগুলোতে একজন প্লেয়ারকে বর্তমান অবস্থাকে বিবেচনা করে নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি ভালো ফলাফলের জন্য পরিকল্পিতি উপায় বের করে নিতে হয়। এর থেকে একজন প্লেয়ার বাস্তব জীবনে পরিকল্পনা করতে শেখে।

৮) পরিস্থিতির উপর সচেতনতা বৃদ্ধি

আমেরিকার Defense News এর একটি রির্পোট থেকে জানা যায় যে একশন ভিডিও গেমসগুলো আর্মিদের কে খেলিয়ে নিয়ে তাদের পরিস্থিতির সচেতনতা বৃদ্ধির ট্রেনিং দেওয়া হয়। অর্থ্যাৎ বিভিন্ন একশন এবং স্ট্রাটেজি গেমসগুলোতে একজন গেমারকে গেমে চলমান পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে হয় এবং পরিস্থিতির উপর ভিক্তি করেই গেমে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হয়। এর থেকে গেমারটি বাস্তবিক জীবনে কিভাবে পরিস্থিতির উপর সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হয় তা শিখে থাকে।

৯) রিডিং এবং ম্যাথ স্কিল বৃদ্ধি

বিভিন্ন কঠিন গেমগুলোতে গেমটি কিভাবে খেলতে হবে সেটা লিখিত আকারে বর্ণিত থাকে। এর থেকে ছোট শিশুটা বর্ণনাটি পড়ে নিয়ে নিজে নিজেই ব্রেনের মধ্যে অংক কষতে থাকে যে কিভাবে গেমটিতে সে পার করবে। এর মাধ্যমে শিশুর রিডিং এবং ম্যাথ স্কিল বৃদ্ধি পায়।

১০) ধৈর্য্যশীলতা বৃদ্ধি

নতুন কোনো ভিডিও গেমে যেকেউ প্রথমবার সফল হতে পারে না। এরজন্য তাকে বার বার চেষ্টা করে পরেই গেমটিতে সফল হতে হয়। এর মাধ্যমে প্লেয়ারে ধৈয্যশীলতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

১১) অনুমান পরীক্ষা

ভিডিও গেমে কোনো বসকে মারতে হলে কিংবা কোনো নির্দিষ্ট লেভেল কমপ্লিট করার জন্য একজন প্লেয়ারকে গেমের উপাদানগুলো সঠিক ব্যবহারের উপর অনুমান করতে হয়। যেমন গেমের বসকে মারার জন্য সে প্রথমে একটি পাওয়ার ও একটি অস্ত্রের ব্যবহার করলো। কিন্তু বসটিকে কুপোকাত করতে পারলো না। এবার সে গেমটির অন্য ৩ বা ৪ টি অস্ত্র এবং পাওয়ারের মধ্যে কোনটি ব্যবহার করলে বসটি মরবে সেটা নিয়ে অনুমান করতে থাকে। এর মাধ্যমে তার অনুমারে পরীক্ষা হয়ে যায়।

১২) মানচিত্রের সঠিক ব্যবহার

প্রায় সব ধরনের একশন, শুটিং কিংবা হরর গেমসগুলোতে একটি মানচিত্র দেওয়া থাকে। সেটি প্লেয়ারটি অনুসরণ করে ভাচুর্য়াল দুনিয়ায় নিজের পথ খুঁজে পেয়ে থাকে। এর মাধ্যমে একটি শিশু বাস্তবিক জীবনে মানচিত্রের সঠিক ব্যবহার করতে শিখে।

১৩) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি

ফার্স্ট পারসন শুটিং গেমসগুলো যেমন কল অফ ডিউটি বা ব্যাটলফিল্ড গেমসগুলো খেলার সময় একজন প্লেয়ারকে একটি নির্দিষ্ট টাস্ক দেওয়া হয়ে থাকে। যেটি কমপ্লিট করার জন্য ম্যাপের বিভিন্ন স্থান থেকে তাকে বিভিন্ন ক্লু খুঁজে বের করতে হয় এবং একটি ক্লুয়ের সাথে অন্য ক্লু জোড়া লাগিয়ে তারপর মিশন কমপ্লিট করতে হয়। এর মাধ্যমে তার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

১৪) মনোযোগ বৃদ্ধি

অনলাইন গেমগুলো প্লেয়ারদের মনোযোগ বৃদ্ধি করে। কারণ অনলাইন গেম (যেমন Dota 2, CSGO, PUBG) খেলতে হলে বেশ মনোযোগের প্রয়োজন হয়। মনোযোগ ছাড়া অনলাইন গেমগুলোতে ভালো স্কোর করা যায় না।

১৫) ঝুঁকি গ্রহণ

একটি গেমে সফলতা পেতে হলে গেমারকে প্রথমে বেশ ঝুঁকি গ্রহণ করে গেমটিতে খেলতে হয়। একবার দুবার কিংবা অনেকবার ব্যার্থ হবার পর সে গেমটিতে সফলতা লাভ করে। ভিডিও গেমে ঝুঁকি গ্রহণ করে পরবর্তীতে লস হলেও সেটা বাস্তবিক জীবনে কোনো প্রভাব ফেলে না। এক্ষেত্রে ভিডিও গেমস খেলে একজন শিশু বা কিশোর বাস্তব জীবনে ঝুঁকি গ্রহণ করতে শিখে। যা তার পরবর্তী জীবনে ব্যবসায় ক্ষেত্রে ঝুঁকি গ্রহণে সহায়তা করে থাকে।

১৬) চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা

ভিডিও গেমে সাধারণত কোনো লেভেল কমপ্লিট করতে হলে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়ে থাকে। এই চ্যালেঞ্জগুলো সঠিক ভাবে পূরণ করে তবেই উক্ত গেমের পরবর্তী পযার্য়ে যাওয়া যায়। এর থেকে একজন প্লেয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে শিখে।

১৭) দলবদ্ধ কাজের প্রতি গুরত্ব বৃদ্ধি

অনলাইন গেমগুলোতে অনেক সময় একজন প্লেয়ার কে একটি টিমের সাথে একত্র হয়ে খেলতে হয়। এখান থেকে দলবদ্ধ হয়ে দলের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করে গেমটিতে সফলতা অর্জন করে থাকে। এর থেকে একজন প্লেয়ার দলবদ্ধ হয়ে কিভাবে কাজ করতে হয় এবং এর প্রতি গুরত্ব বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

১৮) ম্যানেজমেন্ট

অনলাইন ভিডিও গেমগুলোতে একটি দলের একজন লিডার থাকে। লিডারের কাজ হচ্ছে তার টিমের দেখভাল করা, বিপরীত টিমের স্ট্রাজেটিতে পর্যবেক্ষণ করা এবং টিমের সদস্যদের উপর বিশেষ নজর রাখা। এর মাধ্যমে সে বাস্তব জীবনে ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে থাকে।

১৯) বাস্তবিক স্কিল বৃদ্ধি

বর্তমানে এমন অনেক গেম রয়েছে যেগুলো খেলে বাস্তবিক জীবনের স্কিল বৃদ্ধি করা যায়। যেমন প্লেন সিমুলেটর গেমসগুলোতে বাস্তবিক জীবনের একটি প্লেন চালানোর সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়, সার্জেন্ট সিমুলেট গেমে একজন ডাক্তার কিভাবে অপারেশন করেন সেটাও বাস্তবিক ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, আবার অন্যদিকে সাইকেল ভিডিও গেমে একটি সাইকেল কিভাবে চালাতে হয় কখন কোন সময় কোন গিয়ারে সাইকেলটি রাখতে ইত্যাদি সবকিছুই আপনি ভিডিও গেম থেকে শিখতে পারবেন।

২০) নিরাপদ বিনোদন

উন্নত বিশ্বে অনেক গার্জিয়ানরাই মনে করেন যে বাইরের জগতের বিনোদনের থেকে ঘরে বসে ভিডিও গেমস খেলাটা অনেকটা নিরাপদ। যেমন ড্রাগ, অ্যালকোহল কিংবা খারাপ বন্ধুবান্ধবের সাথে মেশা ইত্যাদি জিনিসগুলো থেকে অনেক পিতামাতাই তাদের সন্তানদের কে বিনোদনের জন্য ভিডিও গেমসকে বেশি প্রেফার করে থাকেন।

২১) শিক্ষা অর্জন

আপনি যদি সঠিক ভিডিও গেমটি খেলতে পারেন তাহলে ভিডিও গেমস থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারবেন। যেমন ভিডিও গেমস থেকে মিলিটারি জগত সম্পর্কে আপনার ধারণা আসবে, একজন পাইলট কিভাবে প্লেন চালায় সেটা শিখতে পারবেন, কিভাবে স্কাই জাম্পিং করে সেটা শিখতে পারবেন ইত্যাদি।

২২) ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানলাভ

বর্তমানে বেশ কয়েকটি ভিডিও গেমস সিরিজ অতীতের বিভিন্ন পটভূমিকে নিয়ে তাদের স্টোরিলাইনগুলো সাজিয়ে থাকে। যেমন কল অফ ডিউটি গেমটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে গেম বানিয়েছে, এসাসিন্স ক্রিড শত বছরের আগের সংস্কৃতি নিয়ে গেম বানাচ্ছে ইত্যাদি। এ সকল গেমসগুলো খেলে আপনি ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে পারবেন।

ভিডিও গেমসের নেগেটিভ দিকগুলো:

ভিডিও গেমসের নেগেটিভ দিকগুলো নিয়ে নতুন করে আর কিছুই বলার নেই। কারণ আপনারা যারা অভিভাবক রয়েছেন কিংবা আমার মতো যারা অনেকদিন ধরে ভিডিও গেমস জগতে রয়েছেন তারা ভিডিও গেমসের নেগেটিভ দিকগুলো সম্পর্কে হালকা-পাতলা ধারণা রাখেন। তবুও আজকের টিউনে ভিডিও গেমসের নেগেটিভ দিকগুলো আমি তুলে ধরলাম:

১) কম্পিউটারের উপর চাপ

ভিডিও গেমস এবং শুধু গেমসের মধ্যে তুমুল পার্থক্য রয়েছে। যা আমরা সাধারণত বুঝতে পারি না। খেয়াল করে দেখবেন যে ভিডিও গেমস দুটি শব্দের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে, একটি হচ্ছে ভিডিও এবং অপরটি হচ্ছে গেমস। কোনো একটি কম্পিউটার গেম তখনই ভিডিও গেম হয় যখন সেটি থ্রিডি প্রযুক্তিতে হয়ে থাকে। বর্তমান যুগের ৯০% গেম হচ্ছে ভিডিও গেম, তাই এ নিয়ে বেশি কনফিউজ হবার কারণ নেই। আর বলা বাহুল্য যে সকল ধরনের ভিডিও গেমসই কম্পিউটারের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে বেশিক্ষণ সময় ধরে কোনো ভিডিও গেম চালিয়ে রাখলে দেখবেন যে কম্পিউটার স্বাভাবিকের থেকে বেশি হিট হচ্ছে বা বেশি চাপ নিচ্ছে। শুরুর দিকে এটি তেমন কোনো সমস্যা না হলেও পরবর্তীতে এটি কম্পিউটারের মারাত্বক সমস্যার দিকে ধাবিত হতে থাকে। তবে সীমিত ও সুস্থ নিয়মে ভিডিও গেম খেলতে কম্পিউটারে তেমন ক্ষতি হয় না।

২) ব্রেনের উপর চাপ

ভিডিও গেমস খেললে ব্রেনের ব্যায়াম হয় এটি টিউনের শুরু দিকে আমি বলেছি। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই আপনি যখন জীমে তুলনামূলক ভাবে বেশিক্ষণ ধরে জীম করবেন তখন আপনার শরীলের উপর চাপ পড়বে, শরীল দূর্বল দূর্বল লাগবে। ঠিক তেমনটি বেশিক্ষণ ধরে ভিডিও গেমস খেললে লক্ষ্য করবেন যে মাথা ব্যাথা করছে, চোখ ব্যাথা করছে, মাথার তালু স্বাভাবিকের থেকে বেশি গরম হয়ে আছে।

৩) টাকা পয়সা নস্ট

আসলে কোনো ভিডিও গেমই কিন্তু ফ্রি নয়। Free to Play গেমসগুলোও কিন্তু ব্যবসায়িক চক্করের মাধ্যমে বানানো হয়ে থাকে। আপনি ভিডিও গেম ডিক্স হিসেবে কিনলে সেখানে টাকা খরচ হচ্ছে, অরিজিনাল ডিক্স কিনলে তো কথাই নেই একটি গেমের পেছনেই ২ হাজার থেকে ৪/৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে যায়। আবার অন্যদিকে নেট থেকে ডাউনলোড করে খেলেন? তাহলে একটি প্রমাণ সাইজের গেমস নেট থেকে নামাতে হলেও যে পরিমাণ সময় ডাউনলোডের জন্য খরচ করবেন সেখানে পিসি অন রাখতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে, ব্রডব্যান্ড লাইন হলেও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নেটের বিলও আপনার এই গেমসের পিছনে খরচ হচ্ছে। আর যারা নিয়মিত গেমিং ক্যাফেগুলোতে গিয়ে গেমস খেলেন তারা একটু হিসেব করলেই বেরিয়ে যাবে প্রতি মাসে গেমিং ক্যাফেতে আপনার কত খরচ হচ্ছে।

৪) কিশোর বয়সে উগ্রতা

এই কথাটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। অনেক ছেলেমেয়ে রয়েছে যারা ভিডিও গেমসকে শুধুমাত্র বিনোদনের জায়গা হিসেবে দেখে। আবার কিছু কিছু কিশোর বয়সী ছেলেমেয়ে রয়েছে যারা ভিডিও গেমসের প্রতি প্রায় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য ভিডিও গেমস বেশ বিপদজনক। তারা ভিডিও গেমসকে বাস্তবিক জীবনে প্রয়োগ করতে যায় এবং এটাই তাদের জীবনে বিপদের কারণ হিসেবে হয়ে দাড়ায়। যেমন জিটিএ সিরিজের গেমসগুলো মারামারি বা সংঘর্ষমূলক হওয়ায় এখান থেকে সংর্ঘষগুলো শিখে নিয়ে এই কিশোর-কিশোরীরা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে যায় এবং তখনই তাদের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এছাড়াও ভিডিও গেমস খেলার সময় কেউ তাদেরকে কোনো কথা বললে বা প্রয়োজনে বিরক্ত করলে তারা অনেক উগ্রপন্থি হয়ে যায়। এমনি ভিডিও গেমস খেলার সময় তারা বাবা-মাকেও অমান্য করে বসে। এগুলো কোনো বানানো কথা নয়। নিজের দেখা অভিজ্ঞতা থেকে লিখছি।

৫) শরীল মোটা হয়ে যাওয়া

নিয়মিত ও দীর্ঘসময় ধরে ভিডিও গেমস খেললে শরীল মোটা হয়ে যাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আবার আপনি যদি কোনো ভারী কাজ না করেন কিংবা ব্যায়াম না করেন তাহলে তো কথাই নেই। খেয়াল করে দেখবেন যে যারা প্রোফেশনাল গেমার তাদের ছাড়া আমরা যারা বিনোদনের জন্য নিয়মিত ভিডিও গেমস খেলে থাকি তারা অধিকাংশই “স্বাস্থ্যবান” শরীলের অধিকারী (আমি নিজেও!)।

৬) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ক্ষতি

এটি একটি কমন ইস্যু। বেশিক্ষণ করে ভিডিও গেমস খেললে কিংবা ভিডিও গেমসের প্রতি নেশাগ্রস্থ হয়ে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই আপনার কিংবা আপনার ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার ক্ষতি হবেই।

৭) গালিগালাজ ও অনান্য অভদ্র সংস্কৃতি

অপ্রাপ্তবয়স্ক বা শিশু কিশোররা যখন “প্রাপ্তবয়স্ক”দের জন্য নির্মিত ভিডিও গেমসগুলো খেলবে তখন যেখান থেকে স্বাভাবিক ভাবেই ভালোর থেকে খারাপ জিনিসগুলোই বেশি শিখবে। যেমন আপনার বয়স ৩০ বছর, এখন আপনার কোনো Kids জাতীয় গেম অবশ্যই ভালো লাগবে না, তাই আপনার জন্য আপনায় বয়সের উপযোগী ভিডিও গেমস খেলতে হবে এবং তাহলে আপনি ভিডিও গেমে মজা পাবেন। কিন্তু এই একই গেম আপনার ছোট ভাই বা আপনার অর্ধেক বয়সীর কেউ খেললে তার জন্য এটা অনেক সময় নেগেটিভ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সবসময় ভিডিও গেমস খেলার আগে গেমটির রেটিং এবং গেমটির কনটেন্ট সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা নিয়ে নিবেন। ভিডিও গেমসের রেটিং সম্পর্কে জানতে হলে আমার এই টিউনটি পড়ে দেখতে পারেন।

পরিশিষ্ট:

ভিডিও গেমস অবশ্যই একটি ভালো জিনিস। এটি কম্পিউটার, মোবাইল ব্যবহারকারীদেরকে নির্মল বিনোদন দিয়ে থাকে। কিন্তু অবশ্যই তা হতে হবে সময়মাফিক এবং সঠিক বয়সের জন্য সঠিক ভিডিও গেমটি খেলতে হবে। শুধু খেয়াল রাখবেন ভিডিও গেমস যেন বিনোদন থেকে মৌলিক চাহিদা না হয়ে যায়। ভিডিও গেমস খেলবেন টাইম পাসের জন্য, লেখাপড়ার ক্ষতি করে কিংবা কাজের ক্ষতি করে ভিডিও গেমস খেলার কোনো অর্থই হয় না। অনেকেই বলবেন যে টেকটিউনসে ভিডিও গেমস নিয়ে প্রায় ৩০০ এর বেশি টিউন করে আমি নিজেই কেন এ কথাগুলো বলছি, এগুলো বলছি কারণ এগুলোই সত্যকথা। ভিডিও গেমস আপনাকে বিনোদন ছাড়া আর কিছুই দিবে না। তাই ভিডিও গেমসকে বিনোদনের জায়গাতেই রাখুন। আশা করবো আজকের টিউনটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। টিউনটি সম্পর্কে আপনার কোনো কিছু বলার থাকলে নির্দ্বিধায় নিচের টিউমেন্ট বক্সে লিখে ফেলতে পারেন। আজ এখানেই শেষ করছি। আগামী টিউনে ভিডিও গেমসের আসক্তি নিয়ে একটি বাস্তব ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। আশা করবো সে টিউনটিও আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। সবাই ভালো থাকবেন, টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Level 10

আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস