যেকোন ওয়েবসাইটের ফন্ট পরিবর্তন করুন গুগল ক্রোম দিয়ে!

একঘেয়েমিতা যেকোন পুনরাবৃত্তিমূলক কাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। প্রতিদিন একই কাজ করতে কেউই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। অফিসের চাপ বা সাংসারিক চাপে অতিষ্ট হয়ে উঠলে বা একঘেয়েমি চলে আসলে যে কেউই চায় একটু বাইরে কোথাও ঘুরতে বের হতে। পরিবারসহ রওনা দেয় কোনো সুন্দর স্থান দেখার জন্য। মনটাকে আলাদা কিছু দেবার জন্য। এই যে কাজের মাঝে এই এক আলাদা সময় কাটানো, এটি সত্যিই মানুষকে তার ক্লান্তি ভুলতে সাহায্য করে। এজন্যই মানুষ মাঝে মাঝেই চায় মনকে আলাদা কিছু দিতে। ঈদে বাড়ি আসা একজন মধ্যবয়স্ক লোকও অনেক রাত পর্যন্ত পুরোনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়। একঘেমেয়ি লাগাটা দূর করতে। একই কাজ নতুন উদ্যমে, নতুন আগ্রহে শুরু করতে।

আর আমরা যারা ক্ষুদ্র পরিসরে একঘেয়েমি কাজ করতে করতে অতিষ্ট, তারা চাই কীভাবে এই ক্ষুদ্র জায়গাতেই বৈচিত্র আনা যায়। যারা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে খুব বেশি ইংরেজি টাইপ করে থাকেন তারা 'টাইমস নিউ রোমান' ফন্টটা দেখতে দেখতে একরকম ক্লান্ত। একদিন 'এরিয়াল' ফন্টে লিখুন। দেখবেন অতোটা বিরক্তি আর মনে হচ্ছে না। এটা সকল ক্ষেত্রেই। আপনি যেকোন পুনরাবৃত্তিমূলক কাজের ভিতর যদি ছোট্ট ছোট্ট পরিবর্তন আনতে পারেন সেই কাজটা আপনাদের আর বিরক্তিকর মনে হবে না। শুধু মাইক্রোসফট ওয়ার্ডেই নয়, যারা ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঢুকি, ব্লগ পড়ি, খবর পড়ি তারাও বারবার একই রকম ফন্ট দেখতে দেখতে ক্লান্ত। মনে হয়, যদি ফন্টটা অন্যরকম হতো তাহলে হয়তো অতোটা বিরক্ত লাগতো না। চিন্তা করুন, যখন অন্য ফন্টে কোনো লেখা দেখেন আপনার মনে অটোমেটিক্যালি একটা নতুন রকমের অনুভূতি হয়। তবে যারা এটার আলাদারকম প্রভাবও আছে।

বাংলাদেশে সরকারি অফিসগুলোতে এখনও বিজয় দিয়ে বাংলা টাইপ করা হয়। সেই SutonnyMJ ফন্ট দিয়ে। ইউনিকোড সম্পর্কে তাদের এখনও ধারণা স্পষ্ট নয়। অনেকে শুধুমাত্র এটাই জানেন যে ইন্টারনেটে অভ্র দিয়ে লিখতে হয়। কিন্তু প্রিন্টিং এর সময় তারা ভুলেও অভ্র দিয়ে টাইপ করে না। কারণ, অভ্র-এর ডিফল্ট ফন্ট Vrinda'র অক্ষরগুলো কেমন যেমন, তার মানে সেটা SutonnyMJ'র মতো নয়। কিন্তু বেশিরভাগ লোকই জানেন না যে ইউনিকোডেও 'SolaimanLipi' দিয়ে SutonnyMJ'র মতো স্পষ্ট হরফে লেখা যায়। এটা তারাই করে থাকেন যারা একঘেয়েমিতা উপলব্ধি করতে পারেন না।

তো যাই হোক, তাদের কথা বাদ। অনেক কথাই হলো। আসি মূল বিষয়ে। আপনারা যারা গুগল ক্রোম ব্যবহার করেন, তারা কিন্তু চাইলেই যেকোন ওয়েবসাইটের ফন্টগুলোই পরিবর্তন করে নানা রকম ফন্টে নিজের ওয়েবপেইজকে সাজাতে পারেন। একটু একঘেয়েমি কাজের মধ্যে একটু যদি বৈচিত্র আনা যায় তাহলে আপনারই ভাল লাগবে।

মজিলা ফায়ারফক্সে যেমন বিভিন্ন অ্যাডন যোগ করে অনেক কাজ করা যায়, তেমনি গুগল ক্রোমেও বিভিন্ন এক্সটেনশান যোগ করে অনেক কাজই সহজে করা যায়। এমনকি এসব অ্যাডন বা এক্সটেনশান একজন মানুষকে বিভিন্ন কাজে দক্ষ করে তোলে। এমনকি বিভিন্ন ব্যাপারে স্মার্ট করে তোলে। তো চলুন বন্ধুরা দেখে নেয়া যাক কীভাবে আমরা একটি গুগল ক্রোম এক্সটেনশান ব্যবহার করে কোনো ওয়েব পেইজের ফন্ট পরিবর্তন করতে পারি।

  • ইন্সটল হয়ে গেলে ব্রাউজারের উপরে ডানপাশে ইংরেজির 'এফ' চিহ্নের মতো একটি অপশন দেখতে পাবেন।

  • এর পরের কাজগুলো খুবই সোজা। যেকোন ওয়েব সাইটে যাবেন। আর সেই ইংরেজির 'এফ' এর মতো আইকনটাকে ক্লিক করবেন। সেখানে বেশ কিছু অপশন দেখতে পাবেন। বিভিন্ন তথ্যের উপর ভিত্তি করে ফন্ট খুঁজুন। আর পছন্দমতন যেকোন  ফন্ট সিলেক্ট করুন। তাহলেই দেখবেন পুরো ওয়েব পেইজের ফন্টগুলো পরিবর্তিত হয়ে গেছে।

এরপর আর কোনো কাজ নেই। শুধু ওয়েবসাইট ভিজিট করা আর পছন্দমতন ফন্ট সেট করা। বিষয়টা বেশ মজার। আর এটা আপনাকে ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ে একটা অন্যরকম স্বাদ এনে দেবে। যার কারণে আপনার একঘেয়েমি বা ক্লান্তি দুটোই দূর হবে। মজায় মজায় কাজ করতে পারবেন। এছাড়াও এখানে আরো বেশ কিছু অপশন রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি শুধু পেইজের হেডার পরিবর্তন করতে পারবেন। এছাড়াও কাস্টম অপশন থেকে আপনার  পছন্দ অনুযায়ী জায়গার অংশটুকুর ফন্ট পরিবর্তন করতে পারবেন।

গুগল ক্রোম বেশ শক্তিশালী একটি ব্রাউজার। এটি দ্বারা অনেক ওয়েব পেইজ ইডিটিং ও সহজ হয়। শুধু তাই নয় এর বিভিন্ন ধরনের এক্সটেনশানগুলোর কারণে অনেক কাজগুলো বেশ সহজে করা যায়। উপরের কাজটি গুগল ক্রোমের সবচেয়ে সহজ কাজগুলোর একটি। যে কেউ যদি একবার এসব এক্সটেনশানে মজা পেয়ে যায় আর সে যদি ভাল মানে প্রোগ্রামার হয়ে থাকে তাহলে সে অবশ্যই গুগল ক্রোমের জন্য এ ধরনের আরো অনেক এক্সটেনশান নিজেই তৈরি, ব্যবহার ও সম্পাদনা করতে পারবে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো অনেক ক্ষেত্রে অনেক পিসি সফটওয়্যার দিয়েও যেগুলো সম্ভব হয় না, ক্রোম এক্সটেনশানের মাধ্যমে সেসব বিষয় পর্যন্ত অনেক সহজে সম্পন্ন করা যায়। আমি মজিলা ব্যবহার করি। কিন্তু তারপরও আমি সময় পেলেই বিভিন্ন ধরনের অ্যাডন খৌঁজার চেষ্টা করি যেমন, পাসওয়ার্ড ও বুকমার্ক ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট, হ্যাকিং শেখার সময় কুকিজ ইমপোর্ট এক্সপোর্ট করতাম এসব ব্যবহার করে। এছাড়াও পিসিতেই মোবাইল ভিউ পাবার জন্য বেশকিছু অ্যাডন ব্যবহার করতাম। সত্যি কথা বলতে আপনি যদি একবার এইসব অ্যাডন বা এক্সটেনশানের প্রেমে পড়ে যান, আপনি অনেক কিছুই বেশ সহজে সমাধান করতে পারবেন।

পরিশেষে, টেকটিউনস হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার এক সুবিশাল প্ল্যাটফর্ম। প্রতিনিয়তই থাকবেন নতুন নতুন জ্ঞানের মধ্যে। জানবেন অজানাকে। তবে হ্যাঁ। শুধু জেনেই বসে থাকবেন না। এই জ্ঞানগুলো ছড়িয়ে দিন তাদের নিকট যাদের কাছে এই টিউনগুলো পৌঁছানো সম্ভব হয় না। জ্ঞান নিজের কাছে রাখার জিনিস না। ছড়িয়ে দিন আশেপাশে যারা আছে সবার মাঝে। প্রযুক্তিকে ভালবাসুন, প্রযুক্তির সাথে থাকুন। টেকটিউনসের সাথে থাকুন।

আজকের মতো এ পর্যন্তই। সামনে আবারও হাজির হবো নতুন কোনো তথ্য নিয়ে। আর টিউনটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না। টিউন বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে টিউমেন্ট বক্সে প্রশ্নটি করুন। এছাড়াও ফেইসবুকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

ফেইসবুকে আমি: Mamun Mehedee

Level 2

আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস