সংখ্যা পূজা :: পীথাগোরাসের সংখ্যা প্রীতি :: শুভ ও অশুভ সংখ্যা!!!

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। আসসালামুআলাইকুম । সবাইকে আমার আন্তরিক প্রীতি, সম্মান, শুভেচ্ছা ও ভালবাসা জ্ঞাপন করছি। আশাকরি আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন।

“মানুষের পদপুতো মাটি দিয়া,

দেবতা রচিছে পূজারী দল।

ঐ দেবতা স্বর্গে গেলো,

মানুষ রহিলো ধরনী তল।”

(নজরুল, পূজা অভিনয় কবিতার অংশ)

 

আমরা অনেক রকম পূজার কথা জানি। যেমন চন্দ্র, সুর্য, গ্রহ, নিহারীকা, তারা, ভেজ ও ননভেজ পশু, পাখি, গাছ, মাটির মূরতী ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু অবাক করার মত ব্যাপার হলো একসময় সংখ্যাকেও পূজা করা হতো। পিথাগোরাস নিজেও এই কুসংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন। তখনকার দিনে প্রত্যেকটি সংখ্যাকে কোনো না কোনো মানবিক গুণের সাথে এক করে দেখা হতো।

পীথাগোরাস এভাবে সংখ্যাকে সন্নিবেশিত করেছিলেন যুগ্ন সংখ্যা (জোর সংখ্যা-২,৪,৬,৮...) কে মনে করা হতো বিশ্লেষণযোগ্য এবং সেই কারণেই ক্ষনস্থায়ী স্ত্রী জাতীয় এবং পার্থিব বস্তু সম্পর্কিত। আর অযুগ্ন সংখ্যা (বেজোর সংখ্যা ৩,৫,৭,৯....) গুলিকে মনে করা হতো অবিশ্লেষ্য, পুরুষ জাতীয় এবং পার্থিব বস্তু সর্ম্পকিত। তবে ১ কে অযুগ্ন সংখ্যা হিসেবে গণ্য করা হতো না, ১ কে সমস্ত সংখ্যার উৎস ভাবা হত। ১ ছিলো যুক্তির প্রতিক, কারণ এটি অপরিবর্তনীয়। ২ ছিলো মতের প্রতিক। ৪ ন্যায়ের প্রতিক, কারণ এটি প্রথম পূর্ণ বর্গ সংখ্যা অর্থাৎ দুটি সমান রাশির গুণফল। ৫ছিলো বিবাহের প্রতিক, কারণ এটি প্রথম স্ত্রী (২) এবং প্রথম পুরুষ (৩) সংখ্যার মিলনের ফল (২+৩=৫)-পীথাগোরাস এভাবে সংখ্যাকে সন্নিবেশিত করেছিলেন।

ব্যাবিলন সভ্যতায় ব্যাবিলনবাসীরা ৬০ পর্যন্ত সংখ্যাকে তাদের বিশেষ বিশেষ দেবতার অভিজাত্য সূচক হিসেবে গণ্য করতো। খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রীক পন্ডিত পীথাগোরাস ও তার অনুসারীরাও পঞ্চাশ পর্যন্ত প্রায় সবগুলো সংখ্যাতেই দেবী জ্ঞাণে তাৎপর্য আরপ করেছিলো। পীথাগোরাস বলতেন সংখ্যাই সমগ্র বিশ্বের নিয়ামক। তিনি সংখ্যাগুলোতে বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয় যোগ করে পূজা করার পক্ষপাতি ছিলেন। এক থেকে চার পর্যন্ত এই চারটি সংখ্যার মিলনে সৃষ্ট চিত্রের ন্যায় একটি প্রতিকৃতিতে পীথাগোরাস পন্থীরা বিশেষ ভক্তি করে পূজা করতো। এই টেট্রাকটিস বা পবিত্র চতুর্গুণতাকে মনে করা হতো নর ও নারীর যুক্তি ও ন্যায়ের সমন্বয় এবং বিশ্বসৃষ্টির চারটি মৌলিক উপাদান আগুন, পানি, বাতাস ও মাটির প্রতীক।

টেট্রাকটিসের উদ্দেশ্যে পীতাগোরাস পন্থীদের প্রার্থনার বাণী ছিলো অনেকটা এরকম,

“নম; হে স্বর্গীয় সংখ্যা, দেবতা ও মানুষের স্রষ্টা তুমি। হে পবিত্র টেট্রাকটিস, নিত্য প্রবহমান সৃষ্টির মূল উৎস তোমাতে নিহিত আছে। কারণ, পবিত্র সংখ্যার শুরুতে রয়েছে অপূর্ব নিষ্কলঙ্ক “এক” এবং শেষে রয়েছে পবিত্র “চার” আর এদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সবকিছুর উৎস, সর্বাব্যাপী অনাদী, শাশ্বত, চির অম্লান পবিত্র “দশ”।”

৬, ৭, ৪০ ইত্যাদি ছিলো শুভ সংখ্যা। সাত সংখ্যাটিকে ইহুদীদের কাছ থেকে খ্রীষ্টান ধর্মতত্ত্ব পায় প্রায় উত্তরাধিকার সূত্রে। যেমন- ৭টি মহাপাপ, ঈশ্বরের সাত আত্মা, কুমারী মেরীর সাতটি আনন্দ, ম্যাগডালেন থেকে বিতাড়িত সাত শয়তান, সাতদিন ধরে  সাতজন পুরোহিত সাতটি সংখ্যা নিয়ে জেরিকো শহর পরিবেষ্টিত করেছিলো এবং সপ্তম দিনে তারা সাত বার শহর প্রদক্ষিন করেছিলো ইত্যাদি। আবার ৪০দিন ৪০রাত ধরে বৃষ্টি হবার ফলে মহাপ্লাবন হয়, চল্লিশ দিন চল্লিশ রাত্রি ধরে মুসা (আঃ) সিনাই পর্বতে খোদার সংগে আলাপ করেন, চল্লিশ বছর ধরে ইসরাইয়েল (আঃ) এর সন্তান-সন্তুতিরা মরু প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছিলো ইত্যাদি।

৬৬৬ কে বলা হয় শয়তানের সংখ্যা, তাই ৬৬৬ সংখ্যাকে বহু খৃষ্ট্রান ইহুদী পরিহার করে চলে। ১৩ কে অশুভ সংখ্যা বলা হয় কারণ, যিশু (ঈসা (আঃ)) খ্রীষ্টকে ক্রুসে বিদ্ধ করা হয় Good Friday এর দিন, ৩০ খ্রীষ্টাব্দে। তার আগের রাতে একত্র খাবার খেয়েছিলেন যিশু (ঈসা (আঃ)) ও ১২জন  শিষ্য। মোট ১৩ জন। ঐ রাতের খাওয়াকেই বলা হয় দ্যা লাস্ট সাফার (The Last Supper)। শুধু মাত্র এই কারণেই ১৩কে আজও অপয়া সংখ্যা হিসেবে ধরা হয়। এখনও ইওরোপ এ্যামেরিকায় হোটেল, বাড়ি ইত্যাদিতে ১২ এর পর ১৪ দেয়া হয়, ১২ তলার পরে ১৪ তলা ইত্যাদি। তবে মজার ব্যাপার হল মহাকাশ অভিযানে  এপোলো (Apollo) এর সব মহাকাশযানের যাত্রা সুফল হলেও এপোলো-১৩ (Apollo-13)  এর যাত্রা শুভ হয়নি। এপোলো-১৩ (Apollo-13)   কোনমতে পৃথিবীতে নেমে আসতে সক্ষম হয়েছিলো। তখন ঐ ১৩কেই দোষারূপ করা হয়েছিলো।

অংক ও সংখ্যা নিয়ে পর পর কয়েকটি টিউন করা হল কারণ একটা টেকটিউন কমিউনিটির এক শ্রেণীর কাছে গণিত সংক্রান্ত টিউনগুলো ভালোলাগে। আপাতত কিছুদিন গণিত নিয়ে লিখবো না। কিছু বিষয় মাথার ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে ওগুলো নিয়ে টিউন করবো।

আমার সবগুলো টিউন

কষ্ট করে আমার এই টিউনটি দেখার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি আপনাদের ভালবাসায় সিক্ত ও পরিতৃপ্ত। আপনাদের ব্যাপক সাড়া আমার নিত্যদিনের প্রেরণা।

Level 2

আমি মোঃ আসিফ- উদ-দৌলাহ্। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 1147 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

মা ও বাংলা ভাষার কাঙ্গাল


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ধন্যবাদ

প্রথম ছবিটা ডিলিট করার জন্যে জোর আবেদন করছি !

সংখা সবসময় রহস্যময়. সুন্দর টিউন. ধন্যবাদ

Level 0

Awesome tune
R 1st pic delete korte hbe kano, hindu der debi bole??

Abar sai pithagorous? Abar sai “trivuj ar 2 bahur samoshti 3ritiy bahu oppokha brihottor”?
2004 sal? gonot a “c” great!

Oh!! please pardon me, I am unable to take this pressure. I am going to bed for sleeb!! Good bye…..

    @ভুমিহীন জমিদার: ফিরে যাও, কেনো ফিরে ফিরে চাও।। বসিয়া বিফলো বাসনায়।। (রবীন্দ্র সংগীত)। পাশে থাকার জন্য অনূরোধ করছি। সব টিউন গণিত নিয়ে হবে এমন কোনো কথা নেই। ধন্যবাদ!!!

Sorry with previous comment. “Gonit a “C’ Grade” instead of previous…

১ম ছবিটা না দিলে কি টিউন টা খুব বেশি খারাপ হত??? যদি সম্ভব হয় তবে তা রিমুভ করাই মনে হয় ভাল।।

আপনার অনেকদিন পর টিউন দেখলাম,১ম ছবিতে কি সমস্যা বুঝলাম না,এটা কি একটু একপেশে হয়ে যায় না?শুভ বা অশুভ যা ই হোক ৭ সংখ্যার প্রতি একটা দুর্বলতা আছে

    @একটু অচেনা: জ্বরের ঘোরে যখন টিটিতে বসতে পারিনি আপনাকে খুব মিস করেছি। ৭ এর প্রতি বেশীরভাগ মানুষের দুর্বলতার কারণ হল এর প্রচার ঠিক যেমন ১৩র প্রতি অনিহা। আসলে সঠিক কারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। দেখুন যিশু’র লাস্ট সাফার দিয়ে ১৩কে অপয়া ধরা হয় এর কোনো মানে হয় না। ইসলামে কোনো সংখ্যাকেই অশুভ ধরা হয় না।
    আমারও কিছু সংখ্যা প্রীতি আছে যেমন আমি তুলা রাশি বলে ৬। আর সংখ্যার বিচারে ৯। ৯ হল ডেসিমেলেলের সব চেয়ে বৃহত্তর এই জন্য ৯ দিয়ে অনেক মজার মজার কাজ করে দেখানো সম্ভব ঠিক তেমনি বাইনারীর ১, অকটালের ৭ আর হেক্সার F।
    দু’টি প্রশ্ন
    ১। সেভেন আপ নামটি দেবার কারণ কি?
    ২। ৭৮৬ দ্বারা কেনো বিসমিল্লাহ বুঝানো হয়?
    আর একটি কথা আমি আমার ২০০৫ইং সালের লেখা একটি উপন্যাস সামুতে দিয়েছি আপনি একটু দেখে দিলে ভালো হতো।
    আপনাকে অগ্রীম ঈদ মোবারক!!!

      @মোঃ আসিফ- উদ-দৌলাহ্: সামুতে আমার আইডি নেই তাই কমেন্ট করতে পারব না,কিন্তু উপন্যাস্টা পড়ে নেব।

      786 এর আরবি মানে হয় আমি আল্লাহ এর নামে শুরু করছি বা ইংরেজিতে In the name of god তাই একে বিসমিল্লাহ বুঝানো হয়,তবে অনেকে এই মত সমরথন করেন না।
      সেভেন আপ নামের পিছনে সঠিক কারন এখনও অজানা তবে কিছু জনপ্রিয় গুজব হল

      ১.এটার ৭ টা প্রধান উপাদানের জন্য
      ২.প্রথম দিকে এটাকে ৭ আউন্স এর বোতলে বিক্রি করা হত বলে
      ৩.তবে আমার কাছে মনে হয়েছে এটার প্রস্তুতকারক গ্রিগ নিজেই ৭ কে লাকি মানতেন বলেই এটার নাম সেভেন আপ দিয়েছেন
      এই সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু মজার তথ্য পাবেন এখানে
      http://www.snopes.com/business/names/7up.asp

Level 0

ভালো টিউন। ধন্যবাদ …

Level 0

অগ্রীম ঈদ মুবারক