লিনাক্স এর ইনস্টলেশন কেনো এত কঠিন? সাথে জেনে নিন কিভাবে নিজের একটি কাস্টম লিনাক্স ডিস্ট্রো তৈরি করবেন।

টিউন বিভাগ লিনাক্স
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

সব ধরনের লিনাক্স এর কোর এক হলেই কিছু কিছু জিনিস একটি লিনাক্স ডিস্ট্রোকে অন্য ডিস্ট্রো থেকে আলাদা করে। এর কারণে বিভিন্ন লিনাক্স ডিস্ট্রো এর কোর এক হওয়া সত্তেও প্রতিটির ইনস্টলেশন আলাদা হয়। আবার একি কারণে লিনাক্স ইনস্টল করতে কিছু সমস্যা সবারই হয়। উইন্ডোজ থেকে লিনাক্স এর ইনস্টলেশন প্রসেস যদিও কঠিন। তবে কয়েকবার ইনস্টল করার পর আর সমস্যা থাকে না। তবে নরমাল ইউজার যারা লিনাক্স ব্যবহার করতে চান তাদের জন্য এই ইনস্টলেশন প্রসেস আসলেই বেশ ঝামেলার।

লিনাক্স এর ইনস্টলেশন কেনো এত কঠিন?

আসলে উইন্ডোজ দিয়ে অনেক কিছু করা গেলেও কিছু জায়গায় উইন্ডোজ লিমিটেড। যেমন গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস উইন্ডোজ এর জন্য নির্দিষ্ট। তবে বিভিন্ন থিম ব্যবহার করে কিছুটা হয়ত চেঞ্জ করা যায়, কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে সেই উইন্ডোজ এর ডিফল্ট গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস কাজ করে। এবং থিম ব্যবহার করার জন্য বাড়তি র‍্যামও ব্যবহার করা হয়। ফলে কম্পিউটার স্লো হয়ে যায়। কিন্তু লিনাক্স মোটেও এরকম নয়। কিছু ডিস্ট্রো বাদে প্রায় সব লিনাক্স ডিস্ট্রোই ফ্রী। যে কেউ এসব ডিস্ট্রো এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে তা ইনস্টল করতে পারবে।

আবার যেকোনো লিনাক্স এই নিজের পছন্দমত গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস চালানো যায়। এবং কোন গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস পছন্দ না হলে তা পরিবর্তন করে অন্য ইন্টারফেস লাগানো যায়। এবং এটা করা লিনাক্স এ খুবই সহজ। ২-৩ টা কমান্ড ব্যবহার করেই গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস পরিবর্তন করা সম্ভব। আর সবচেয়ে বড় কথা লিনাক্স এর প্রায় সব কিছুই ফ্রী। যেকোনো সফটওয়্যারের সোর্স কোড পরিবর্তন করে নিজের মত করে নেয়া সম্ভব। কারণ ফ্রী সফটওয়্যারগুলোর সোর্সকোডও ফ্রী।

এসব কারণে অনেকেই লিনাক্স ব্যবহার করেন বা করতে চান। কিন্তু যারা প্রথমবার লিনাক্স ব্যবহার করছেন তাদের লিনাক্স ইনস্টল নিয়ে অনেক ঝামেলা হতে পারে। আর যদি উইন্ডোজ এর সাথে লিনাক্স ডুয়াল  বুট করতে চান তবে ঝামেলা আরো বাড়তে পারে। কারণ প্রথমে এই কাজটি করা অনেক কঠিন। অনেক টিউটোরিয়াল দেখেও ঠিকভাবে উইন্ডোজ এবং লিনাক্স ডুয়াল বুট করতে আপনার অনেক ঝামেলা হবে।

লিনাক্স এর ফাইল সিস্টেম অনেক বেশি জটিল বলেই লিনাক্স ইনস্টল করতে এত ঝামেলা হয়। আর লিনাক্স এ অনেক বেশি ফিচার থাকার কারণেও লিনাক্স ইনস্টল করা কঠিন। তাই এই টিউন আমি সবচেয়ে সহজ থেকে কঠিন লিনাক্স ইনস্টলেশন  সম্পর্কে বলবো। যারা লিনাক্স ব্যবহার করেন এবং যারা লিনাক্স ইনস্টল দিবেন ভাবছেন তাদের জন্য আশা করি টিউনটি কাজে লাগবে

ডেবিয়ান(Debian)

যেকোনো লিনাক্স ডিস্ট্রো থেকে ডেবিয়ান লিনাক্স ইনস্টল করা অনেক বেশি সহজ। সহজ এবং অনেক বেশি ফিচার থাকার কারণে ডেবিয়ান অনেকেই ব্যবহার করেন। অনেক বিখ্যাত একটি ডেবিয়ান লিনাক্স হল উবুন্টু। ডেবিয়ান ব্যবহার করতে চাইলে উবুন্টু দিয়ে শুরু করাই ভাল। কারণ এটি ব্যবহার এবং ইনস্টল করা তুলনামূলক সহজ। তবে সহজ হলেই যেকোনো লিনাক্স ইনস্টল করার সময় আপনাকে কিছু জিনিস জানতেই হবে। এবং কিছু টেকনিক্যাল টার্ম সম্পর্কে যদি আপনার ধারণা না থাকে তবে আপনি লিনাক্স ইনস্টল করতে পারবেন না।

যেমন যেকোনো লিনাক্স ইনস্টল করার সময় একটি হোস্টনেম দিতে হয়। এই হোস্টনেম নেটওয়ার্ক এ আপনার কম্পিউটারের নাম হিসেবে সো করে। ডেবিয়ান আপনি গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস এর সাহায্যে ইনস্টল করতে পারবেন আবার কীবোর্ড এর মাধ্যমেও ইনস্টল করতে পারবেন। যেভাবেই ইনস্টল করুন না কেন আপনাকে কিছু অপশন দেয়া হবে, যেমন আপনি কোণ গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস চান, কি কি সফটওয়্যার ইনস্টল করতে চান, ইত্যাদি। এগুলো ঠিকভাবে দিলেই আপনার পিসিতে ডেবিয়ান লিনাক্স ইনস্টল হয়ে যাবে।

স্ল্যাকওয়ার(Slackware)

এটি অনেক পুরাতন একটি লিনাক্স ডিস্ট্রো। তাই স্ল্যাকওয়ার ইনস্টল করা একটু ঝামেলাই। এটি ইনস্টল করা ডেবিয়ান লিনাক্স এর থেকে একটু কঠিন। তবে টিউটোরিয়াল দেখে এবং বিভিন্ন ব্লগ পরলে কোন সমস্যা ছাড়াই আশা করি আপনি স্ল্যাকওয়ার ইনস্টল করতে পারবেন। স্ল্যাকওয়ার ইনস্টল করার সময় আপনি অনেক বেশি অপশন পাবেন। সফটওয়্যার ইনস্টলের পাশাপাশি আপনি এই লিনাক্স ইনস্টল করার সময় আরো নানা ধরনের প্যাকেজ ইনস্টল করার সুযোগ পাবেন। তাই আপনার প্রয়োজনীয় প্যাকেজগুলো সম্পর্কে জেনে সেগুলোতে ইনস্টল করে নিবেন। তবে অপ্রয়োজনীয় প্যাকেজ ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকুন।

NuTyX

আপনি যদি এই লিনাক্স ডিস্ট্রোটি ইনস্টল করেন তবে আপনি এই ডিস্ট্রো এর সাথে একবারে কোন প্যাকেজই প্রি-ইনস্টল করা পাবেন না। এবং NuTyX পুরো ইনস্টলেশনটি হয় কমান্ড লাইন এর মাধ্যমে। হার্ড ডিস্ক পার্টিশন থেকে শুরু করে সব কিছু কমান্ড লাইন এর মাধ্যমে করতে হয়। এই লিনাক্স ডিস্ট্রোটি ইনস্টল করার পর কমান্ড লাইন ব্যবহার করে আপনাকে বাকি সব সফটওয়্যার প্যাকেজ ইনস্টল করতে হবে।

তবে NuTyX লিনাক্স ডিস্ট্রোটি ব্যবহার করতে আপনার লিনাক্স সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে। এবং জানতে হবে কিভাবে লিনাক্স এর কমান্ড লাইন ব্যবহার করতে হয়।

জেন্টো(Gentoo)

যারা লিনাক্স নিয়ে কাজ করেন তারা হয়ত এই লিনাক্স ডিস্ট্রো সম্পর্কে আগেই জানেন। কারণ এই লিনাক্স এর কোন ইনস্টলার নেই। তাই আপনাকে পুরো কার্নেল নিজে থেকে বিল্ড করতে হবে। তারপরে ইনস্টল করতে হবে। তাই লিনাক্স এর ফাইল সিস্টেম সম্পর্কে যদি ভাল ধারণা না থাকে তাহলে এই লিনাক্স ডিস্ট্রো থেকে দূরে থাকাই ভাল। তবে যেহেতু সব নিজে থেকেই করতে হবে তাই আপনি যেমন চান তেমন ভাবে এই লিনাক্স ডিস্ট্রোকে মডিফাই করে নিতে পারবেন।

আপনি যেই ফিচারগুলো পছন্দ করেন সেগুলো রেখে বাড়তি ফিচারগুলো কেটে দিতে পারেন। আবার আপনার যেই যেই সফটওয়্যারগুলো বেশি দরকার সেগুলো এই লিনাক্স এর ইনস্টলেশন ফাইলে বাইন্ড করে দিতে পারেন। এরকম আরো নানা কাজ এই লিনাক্স ডিস্ট্রো দিয়ে করা সম্ভব। তাই যারা অনেক বেশি ফ্লেক্সিবিলিটি চান তারা এই ডিস্ট্রোটি বিল্ড করে ব্যবহার করতে পারেন। তবে শুরু থেকে এই লিনাক্স শিখতে আপনার একটু সময় লাগবে।

এক্সহারবো(Exherbo)

এই লিনাক্স ডিস্ট্রোটি উপরের জেন্টো এর মতই। তবে এতে বাড়তি কিছু ফিচার আছে। তবে এক্সহারবো লিনাক্স ডিস্ট্রোকে রান বা ইনস্টল করার কোন সোজা পদ্ধতি নেই। এই লিনাক্স এ সবকিছু আপনাকেই করতে হবে। যেমন অন্যান্য লিনাক্স ডিস্ট্রোগুলোতে হার্ড ডিস্ক অটো মাউন্ট হয়। কিন্তু এক্সহারবো লিনাক্স ডিস্ট্রোতে আপনাকে হার্ড ডিস্ক মাউন্ট করতে হবে শুরুতেই। এমনকি হার্ড ডিস্ক পার্টিশন থেকে শুরু করে কার্নেল বিল্ড করা সব আপনাকেই করতে হবে। এই লিনাক্স নিয়ে কাজ করা এত ঝামেলার কারণ এটি আসলে সাধারণ ইউজারদের জন্য তৈরি হয় নি। এটি আসলে যারা লিনাক্সএ খুব বেশি দক্ষ তাদের জন্য। তাই আপনি যদি মনে করেন আপনি লিনাক্স এর ফাইল সিস্টেম এ অনেক বেশি পারদর্শী। তাহলে দেরি না করে এক্সহারবো নিজে কাজ শুরু করে দিন।

লিনাক্স ফ্রম স্ক্রাচ

এটি আসলে কোন লিনাক্স ডিস্ট্রো না। এটি একটি গাইড যেটি ব্যবহার করে আপনি নিজের একটু লিনাক্স ডিস্ট্রো বানিয়ে ফেলতে পারবেন। তবে কাজটি এত সহজ নয়। তবে এই গাইডে অনেক বিস্তারিতভাবে সবকিছু বর্ণনা করা আছে, যে কিভাবে একটি লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম বানাতে হয়। যদি একবারে শুরু থেকে একটি লিনাক্স ডিস্ট্রো তৈরি করতে চান তবে এই ওয়েবসাইটে গেলেই সব গাইড-লাইন পাবেন। এই কাজটি আপনাকে করতে হলে লিনাক্স সম্পর্কে অনেক কিছু শিখতে হবে। জানতে হবে এবং বুঝতে হবে।

 

শেষ কথা

আপনি যেই লিনাক্সই ব্যবহার করতে চান না কেন। আগে দেখতে হবে সেই লিনাক্স ডিস্ট্রোটি আপনার চাহিদামত সব ফিচার দিতে পারে কিনা। তবে শুরু করার জন্য ডেবিয়ান ব্যবহার করাই ভাল। তবে সব লিনাক্স ডিস্ট্রো এরই কিছু সমস্যা এবং সুবিধার দিক আছে। একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই এই সম্পর্কে জানতে পারবেন।

টিউনটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি আপনি লিনাক্স সম্পর্কে নতুন কিছু জানতে পেরেছেন। টিউনটি কেমন হল তা জানালে অনেক বেশি খুশি হব। এবং পরবর্তীতে আরো ভাল ভাল লিনাক্স সম্পর্কে টিউন করতে পারবো আশা করি। সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।

Level 2

আমি আশরাফুল ফিরোজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 77 টি টিউন ও 35 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস