জেনে নিন কেন আমাদের মিডিয়াটেক প্রোসেসর যুক্ত স্মার্টফোন কেনা উচিত নয়!

টিউন বিভাগ মোবাইলীয়
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

স্মার্টফোন কেনার কথা আসলে - স্পেসিফিকেশন এর যে জিনিসটির প্রতি আমরা প্রথমেই চোখ দেই তা হল প্রোসেসর। কারন এটিই হল প্রধান একটি কম্পোনেন্ট যা স্মার্টফোনকে স্মার্ট করে তোলে, তাছড়া এটি একটি ফিচার ফোন ব্যাতিত আর কিছুই থাকত না। স্মার্টফোনের প্রসেসর ক্ষেত্রে যে কোম্পানিগুলো বাজারে রাজত্ব করছে, সেগুলি হলঃ

  • কুয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন
  • মিডিয়াটেক
  • স্যামসাং এর এক্সিনস

তবে কুয়ালকম ও মিডিয়াটেক এর প্রোসেসরগুলোই  বাজারের বেশি ফোনে দেখা মিলছে।

আজকের টিউনে আমরা আলোচনা করব মিডিয়াটেক প্রোসেসর সমৃদ্ধ ফোন আমরা ব্যবহার করব কিনা? মিডিয়াটেক স্মার্টফোন কি সময়ের সাথে এখন আমাদের জন্য মানানসই? এ বিষয়ে আশা করি আজকের টিউনটি ভালোই লাগবে।

কম দামে মিডিয়াটেকঃ

আমরা জানি, মোবাইল প্রোসেসর এর কথা আসলে দুটি কোম্পানি উঠে আসে একটি কুয়ালকম আর অন্যটি মিডিয়াটেক। আর এই মিডিয়াটেক প্রোসেসরই আজ আমাদের আলোচনার মূখ্য বিষয়। আমরা যদি এক দুই বছর আগের স্মার্টফোন মার্কেট বা আজকের বাজারের এর দিকেই তাকাই না কেন - তবে আমরা দেখতে পারব বাজেট স্মার্টফোন বা ৬-৭-৮-৯ কিংবা ১০ হাজার টাকার স্মার্টফোনে মিডিয়াটেক এর প্রোসেসর ব্যবহার করা হয়েছে বা হচ্ছেও।

এক দুই বা তিন বছর আগে এই সকল দামে মিডিয়াটেক প্রোসেসর এর স্মার্টফোন নেয়াটা স্বাভাবিক ছিলো - কেননা তখন এই দামে মিডিয়াটেক ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাচ্ছিল না এমনকি ম্যানুফ্যাকচারার দের কাছেও পাইকারী দামে ৬-৭-৮-৯-১০ হাজার টাকার ফোন বানাতে মিডিয়াটেক ব্যাতিত অন্য কোন প্রোসেসর ছিল না।

তবে এখন ব্যাপারটি কিন্তু ভিন্ন -কেননা এখন কুয়ালকমও কম দামের ভেতর বা বাজেট এর ভেতর তাদের স্ন্যাপড্রাগন ৪২৫, স্ন্যাপড্রাগন ৪৩৫ এসব প্রোসেসর দিচ্ছে তাই নয় কি? এখন যদি মিডিয়াটেকের কতগুলো প্রোসেসর এর কথা বলা হয় যেমনঃ মিডিয়াটেক ৬৭৩৭, মিডিয়াটেক ৬৭৫০, মিডিয়াটেক ৬৭৫৩, মিডিয়াটেক ৬৭৫৫ তবে বলা যেতেই পারে দামের হিসেবে আমাদের এটি যথেষ্ট দিচ্ছে না - কার্যকারিতায়, ব্যাটারি ব্যবস্হাপনায় ইত্যাদি ইত্যাদি ক্ষেত্রে।

এখন আরেকটি ব্যাপার সেটা হল, কম্পিউটার এর প্রোসেসর ভিন্ন তবে স্মার্টফোন প্রোসেসর এর আউটপুট হয় হল দুটিভাবেঃ

  • সিপিইউ ক্ষমতা
  • জিপিইউ ক্ষমতা

মিডিয়াটেক এবং তার বন্ধু মালিঃ  Mali GPU

মিডিয়াটেক এখানে ব্যবহার করে মালি এর জিপিইউ [জিপিইউ মানে গ্রাফিক্স প্রোসেসিং ইউনিট]। মালি জিপিইউ টির মূল প্রতিষ্টান হল ARM। আর কুয়ালকম জিপিইউ হিসেবে ব্যবহার করে - তাদের নিজস্ব জিপিইউ যাকে তারা বলে এডরিনো (Adrino)। তবে মিডিয়াটেক মালি জিপিইউ ব্যবহার করে এখানে সমস্যা মালি জিপিইউ এ নেই।

এখানে আমারর লেখা নোট ৮ এর রিভিউতে দেখতে পারবেন স্যামসাং তাদের এক্সিনস ৮৮৯৫ মডেল এর প্রোসেসরে জিপিইউ হিসেবে মালি জি৭১ ব্যবহার করেছে। তাই এখনে মিডিয়াটেক মালি এর যে মডেল গুলো বেছে নেয় তা হল আসল সমস্যা। এখানে মালি ৪০০, মালি ৭৫০ জিপিইউ ব্যবহার করে তা আসলে পাওয়ার ফুল হয়না। বাজেটফোন গুলোতে বিশেষ করে ৯ হাজারের নিচে তো মালি ৪০০ ছাড়া আর কোন কথাই নাই। তাই সকল মিডিয়াটেক ডিভাইসে সর্বপরি বাজেট ডিভাইসে গ্রাফিক্স হয় একেবারে বাজে, গেমিং হয় একদম ল্যাগে ভরপুর!

মিডিয়াটেক কোর এর রাজাঃ

এখানে মিডিয়াটেক এর দ্বিতীয় যে বিষয়টি সেটি হল কোর এর খেলা! কোয়াড কোর, অক্টাকোর, হেক্সাকোর (ওএমজি!এতগুলা কোর.) এই কোর সেই কোর ইত্যাদি। এখানে যা হয়েছে প্রোসেসরটি তো দক্ষ বা ক্রিয়াশীল হতেই পারেনি, তা ব্যাতিত নতুন নতুন আরও সমস্যার সৃষ্টি করেছে। প্রথমেই যে সমস্যাটি সেটি হল হিটিং বা গরম হওয়া; আরেকটি যে সমস্যা তা হল ব্যাটারি বেশী খেয়ে ফেলা। এখানে এর ফলে যা হয় তা হল সেরকম ভালো যে পারফর্মেন্স পাওয়ার যে কথাটি ছিল তা পাওয়া যায়না।

ন্যনোমিটার প্রযুক্তিঃ

প্রোসেসর তৈরির ক্ষেত্রে আরেকটি যে বিষয়; তা হল এর চিপ সাইজ। এখানে মিডিয়াটেক এর চিপ বা বলতে গেলে হার্ডওয়্যার তৈরি হয় ২০-২৮ ন্যনোমিটার প্রযুক্তিতে। যদিও সাম্প্রতিক x30 মডেলে তারা অনেক উন্নতি এনেছে। অন্যদিকে কুয়ালকম এর দিকে তাকালে দেখা যায়; তাদের খুব জনপ্রিয় একটি প্রোসেসর ৬২৫ -যাতে ১৪ ন্যানোমিটার চিপ প্রযুক্তিটি ব্যবহৃত হয়েছে। যার ফলে নিঃসন্দেহে পাওয়ার, কার্যক্ষমতা এর দিক দিয়ে এটি অনেক এগিয়ে থাকবে। আর এটি মিডিয়াটেক এর মতন একটুতেও গরম হয়না। তাই মিডিয়াটেক এর তুলনায় একটি ব্যালেন্সড পারফর্মেন্স পাওয়া যায় এই কুয়ালকম এর সকল প্রোসেসরগুলিতে।

শেষ কথাঃ

এখানে বলা হচ্ছে না, মিডিয়াটেক এর যে প্রোসেসর তা খারাপ। অনেক প্রোসেসর রয়েছে যা ভাল, তবে একই দামে যদি স্ন্যাপড্রাগন এর সাথে তুলনা করা হয় - তবে মিডিয়াটেক কখনই আগে আসতে পারবে না। তাই এখন যদি ৯ হাজার থেকে শুরু করে স্মার্টফোনগুলিতে কুয়ালকম এর প্রোসেসর পাই; তবে কেন সেই দামে মিডিয়াটেক এর খারাপ হার্ডওয়্যার ওয়ালা স্মার্টফোন কিনব?

অন্যদিকে কুয়ালকম এর দক্ষ জিপিইউ, সামঞ্জস্যী মডেল এগুলো ফলে একটি ব্যালেন্সড প্রোসেসর পাওয়া যায়। যার কার্যকক্ষমতা হয় অনেক উন্নত। আর কুয়ালকম এর R&D (রিসার্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট) তা মিডিয়াটেক এর চাইতে অনেক বেশি তাই এখানে একটি ভালো প্রোসেসর পাওয়া যায়।

আমরা কী ফোনের ভেতর কেবল ক্যামেরা (ওপো.), ব্যাটারি দেখে সেগুলি কিনব? পরে আপনার ১৬ মেগা পিক্সেল মিডিয়াটেক ওয়ালা ফোনে ক্যামেরা ব্যবহার করতে গিয়ে, সেটটি হ্যাং হয়ে গেল! তখনকি ক্যামেরা আপনাকে হ্যাং থেকে বাঁচাবে? তাই সবকথার এক কথা মিডিয়াটেক যে দামে আমাদের স্ন্যাপড্রাগন ৪২৫, ৪৩৫ দিচ্ছে আর যে কার্যক্ষমতা দিচ্চে; মিডিয়াটেক এই দামে আমাদের তা দিচ্ছে না।

তাই সবশেষে আপনি কি ব্যবহার করবেন তা আপনার উপর। হয়ত এই টিউন থেকে ধারনা পেয়েছেন আপনি মিডিয়াটেক স্মার্টফোন কিনবেন কিনা। ভালো লাগলে শেয়ার করবেন। নিচে টিউমেন্টে টিউমেন্ট থাকলে জানাবেন।

টিজি অবলম্বনে তৌহিদুর রহমান মাহিন

সামাজিক মাধ্যমে আমিঃ ফেসবুক | টুইটার 

Level 12

আমি Touhidur Rahman Mahin। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 326 টি টিউন ও 88 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

ভালোবাসি প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে, ভালবাসি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

অত্যন্ত প্রয়োজনিয় একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন,আমি প্রথম থেকেই মিডিয়াটেক অপছন্দ করি, কারণ প্রত্যেকটা মিডিয়াটেক ডিভাইস কিছুদিন চলার পর অদ্ভুত আচরন করে, কি কি করে তা বলে শেষ করা যাবে না, এক কথায় বলা যায় প্রসেসরটির মাথা নষ্ট হয়ে যায়,

একমত হতে পারলাম না, অনেক মিডিয়াটেক প্রসেসর একই রেঞ্জ কোয়ালকোম থেকে অনেক ভালো হয়, কখনোই মডেল বাই মডেল এবং রিয়াল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স তুলনা না করে শুধু তত্ত্ব দিয়ে তুলনা করা সম্ভব নয়। হ্যাঁ, হাই এন্ডের জন্য মিডিয়াটেক খারাপ চয়েজ ব্যাট অলোয়েজ নয়!

borhan vai i agree with you

আমিও তাহমিদ বোরহান ভাইয়ের সাথে একমত। টিউনটি ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাই।