ভিপিএন কেন এবং কারা এটি ব্যবহার করে?

Level 12
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই? আশা করছি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। বন্ধুরা আজকে আমরা কথা বলব ভিপিএন নিয়ে। ভিপিএন কি, কেন ব্যবহার হয় এবং এটি কারা ব্যবহার করে ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব আজকের এই টিউনে। তবে এজন্য পড়তে থাকুন সম্পূর্ণ টিউনটি।

ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক কি?

what is vpn

ভিপিএন (VPN) এর পূর্ণরূপ হচ্ছে virtual private network (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক)। প্রাইভেট নেটওয়ার্ক এর বিষয়টি দেখে আপনারা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন যে এটিতে কোন নিরাপদ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা রয়েছে। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন একটি এনক্রিপশন প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে। ভিপিএন ভালো এবং খারাপ দুই ধরনের মানুষই ব্যবহার করে থাকে। এখানে খারাপ বলতে হ্যাকারদের কথা বুঝানো হয়েছে। এছাড়া খারাপ মানুষের তালিকায় থাকতে পারে বিভিন্ন নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে ভিজিট করা লোকদের কথা।

ভালো মানুষদের ভিপিএন ব্যবহার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের ব্যক্তিগত কোনো তথ্য যাতে third-party কারো কাছে চলে না যায়। হ্যাকাররা এটি ব্যবহার করে মূলত সে যা করছে সেটি যেন ভিপিএন এবং সে ছাড়া আর কেউ না জানে। এখানে দুই ধরনের মানুষই মূলত গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করে থাকে। ভিপিএন এনক্রিপশন প্রক্রিয়ায় ডেটা আদান-প্রদান করার জন্য সবাই ব্যবহার করে থাকে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে ভালো এবং খারাপ দুই ধরনের মানুষেরই এই ভিপিএন ব্যবহার করার উদ্দেশ্যেই হচ্ছে নিজের নিরাপত্তা। কোনভাবেই যেন তাকে এবং তার ডেটা গুলোকে অন্য কেউ দেখতে না পারে। যেটি সম্ভব হয় ভিপিএন এর এনক্রিপশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এবার প্রশ্ন আসতেই পারে যে এনক্রিপশন কি?

এনক্রিপশন হচ্ছে এমন এক পদ্ধতি যার মাধ্যমে আপনি যখন কোন ডাটা কাউকে পাঠানোর জন্য বা কোথায় লিখে রাখার জন্য বা স্টোর করার জন্য তৈরি করবেন তখন তা এমন একটি ফর্মে থাকবে যাতে আপনার সেই ডাটাটি শুধু আপনি যাকে পাঠানোর জন্য তৈরি করেছেন, সেই যেন শুধুমাত্র সেটি অ্যাক্সেস করতে পারে এছাড়া অন্য কেউ যাতে সেটি দেখতে না পারে। এছাড়া ভুল করে যদি সেই ডেটাগুলো কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির কাছে চলেও যায় তবে সে যেন সেই ডাটাটির কোন তথ্য খুঁজে বের করতে না পারে। এটাই হচ্ছে এনক্রিপশন এর মূল মন্ত্র।

বর্তমানে এনক্রিপশন প্রক্রিয়া ডেটা আদান প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এনক্রিপশন নিয়ে পরবর্তী কোন টিউনে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে ইনশাআল্লাহ। ততক্ষণ পর্যন্ত টেকটিউনসের সঙ্গে থাকার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

ভিপিএন কেন ব্যবহার হয়?

How to vpn used

ভিপিএন কেন ব্যবহার হয় এটি বুঝাতে আপনাকে ছোট একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ইন্টারনেটে ধরুন আপনি কোন ভিডিও দেখবেন। এজন্য আপনি ইউটিউবের সেই ভিডিওতে ক্লিক করার পর আপনার সেই রিকোয়েস্টটি চলে যাবে আইএসপি এর কাছে। এক্ষেত্রে আপনার আইএসপি হতে পারে কোন টেলিকম কোম্পানি অথবা আপনি যদি ওয়াইফাই ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে সেই আইএসপি।

আপনি যে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন সেটি কিন্তু আইএসপি এর অধীনে ব্যবহার করা হয়। আপনার অনুরোধটি আইএসপি থেকে চলে যাবে ইউটিউব এর সার্ভারে। পরবর্তীতে সেই সার্ভার থেকে নেওয়া ডেটা অনুসারে আপনাকে কিন্তু ভিডিওটা দেখানো হবে। সার্ভার থেকে আইএসপি এবং আইএসপি এর কাছ থেকে আপনার কাছে সেই ভিডিওটি পৌঁছে যাবে। এভাবে করেই কিন্তু আপনি ইন্টারনেটের সকল তথ্যাবলী দেখতে পারেন। ইন্টারনেটের পুরো প্রক্রিয়াটি কিন্তু এভাবেই কাজ করে থাকে। এটিতো গেল একটি সাধারন প্রক্রিয়া।

আমরা প্রতিদিনই ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ভিজিট করে থাকি। ইন্টারনেট এর প্রত্যেকটি ওয়েবসাইট কিন্তু প্রত্যেকটি দেশের জন্য তৈরি করা হয় না। কোন কোন ওয়েবসাইট থাকে যেগুলো শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোন দেশের লোকেদের এক্সেস করার জন্য তৈরি করা হয় বা নির্দিষ্ট কোন এলাকার মানুষদের কে ব্যবহার করার অনুমতি রাখা হয়। এবার অন্য কোন দেশের মানুষেরা যদি সেই ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে চায় তবে তাকে অবশ্যই সেই দেশে যেতে হবে। কিন্তু একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য একটি দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করা তো অসম্ভবই বটে।

কোন একটি ওয়েবসাইটে কোন দেশের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার পেছনে যেটি কাজ করে তাহলে আইপি অ্যাড্রেস। কোনভাবে যদি সেই আইপি এড্রেস টিকে লুকিয়ে ফেলা যায় এবং সেই দেশের আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করা যায় তবে কিন্তু সেই ওয়েবসাইটে খুব সহজেই প্রবেশ করা যাবে। এক্ষেত্রে ভিপিএন আপনাকে সেই দেশের আইপি অ্যাড্রেস দেবে। ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে মূলত নিজের আইপি অ্যাড্রেস লুকায়িত থাকে।

নিজের দেশের আইপি অ্যাড্রেস বাদ দিয়ে অন্য কোন দেশের আইপি অ্যাড্রেস ভিপিএন দিয়ে থাকে। যার ফলে আপনার দেশে সেই ওয়েবসাইটটি নিষিদ্ধ হওয়া সত্বেও ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি সেই দেশের ওয়েবসাইটগুলো ভিজিট করতে পারবেন। এছাড়া কোন দেশের সরকার বা আইএসপি কিছু নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটকে ব্লক করে রাখতে পারে। ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে সেসব ব্লক করা ওয়েবসাইটেও প্রবেশ করা যায়। ভিপিএন শুধুমাত্র নিজের আইপি অ্যাড্রেস লুকানোর করার জন্য ব্যবহার করা হয় না। ভিপিএন ব্যবহার করা হয় ব্যক্তিগত তথ্য এর নিরাপত্তার জন্য।

ভিপিএন তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ভিপিএন ব্যবহারের ফলে আপনি কোন তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে সেটিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন। ভিপিএন এ কানেক্ট হয়ে আপনি যদি কোন কিছু ইন্টারনেটে করেন সেটা কিন্তু আপনি সরাসরি করছে না, এটি আপনি করছেন ভিপিএন এর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে আপনি কোন কিছু করলে সেটি চলে যায় ভিপিএন এর কাছে, ভিপিএন সেটি আপনার লক্ষ্যে সেই তথ্যটি পৌঁছে দেয় অথবা সেখান থেকে নিয়ে আপনাকে দেয়।

ভিপিএন সর্বদা ডেটাগুলোকে আপনাকে এনক্রিপশন প্রক্রিয়ায় দিবে। যার ফলে কেউই বুঝতে পারে না যে আপনি কোন ধরনের তথ্য আদান প্রদান করছেন। এক্ষেত্রে আপনার তথ্যগুলো শুধুমাত্র ভিপিএন সার্ভিস প্রোভাইডার এর কাছেই সংরক্ষিত থাকবে।

যেমন, বর্তমানে অনেক ফ্রি ওয়াইফাই জোন রয়েছে। সেইসব ফ্রি ওয়াইফাই দেখে আপনি যদি কোনো একটিতে কানেক্ট করেন এবং সেখান থেকে যদি আপনি ক্রেডিট কিংবা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে কোন কিছু কেনেন, সেক্ষেত্রে আপনার তথ্য চলে যেতে পারে হ্যাকারদের কাছে। কেননা ফ্রি ওয়াইফাই এর ব্যবস্থায় মূলত হ্যাকারেরা আড়িপেতে রয়েছে। আপনি যা কিছু করবেন সে সমস্ত তথ্য চলে যাবে তার কাছে। কিন্তু যদি এক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে সেখানে কাজ সম্পাদন করেন তাহলে ভিপিএন এর এনক্রিপশন সুবিধা থাকার কারণে আপনার তথ্যগুলো অন্য কেউ দেখতে পারবে না।

নিজের তথ্যগুলো কে নিরাপত্তা এবং ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচার জন্য মূলত ভিপিএন ব্যবহার করা হয়।

ভিপিএন কারা ব্যবহার করে?

আমি এখানে আগেই বলেছি যে, ভিপিএন ভালো এবং খারাপ দুই ধরনের মানুষই ব্যবহার করে থাকে। ভালো মানুষগুলো নিজেদের তথ্য এর গোপনীয়তার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করে। আর খারাপ মানুষেরা এটিকে ব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে। যাতে করে তারা কোন অপরাধ করলেও তাদেরকে খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে যায়।

যদিও ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে একেবারে নিজের পরিচয় গোপন করা যায় না। আপনি ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে যেসব ওয়েবসাইটে প্রবেশ করছেন কিংবা যে সব অবৈধ কার্যকলাপ সম্পাদন করেছেন সেগুলোর সমস্ত কিছুর রেকর্ড থাকে ভিপিএন সার্ভিস প্রোভাইডার এর কাছে। আপনি যদি মনে করেন যে ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে কোন ওয়েবসাইটে হ্যাক করলে আর ধরা যাবে না সেটি ভুল ধারণা। এক্ষেত্রে আপনার তথ্যটি আইএসপি এর কাছে না থাকলেও ভিপিএন সার্ভিস প্রোভাইডার এর কাছে সে তথ্যটি রয়েছে। আপনি যদি কোন অপরাধ করে থাকেন ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি সেটির অনুসন্ধান করে তবে আপনার তথ্যটিও খুঁজে বের করা সম্ভব।

এক্ষেত্রে সেই তথ্যটি কোন জায়গা থেকে কোথায় গিয়েছে সেটি তারা সহজেই ধরে ফেলতে পারবে। আমরা যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজেদের কে ট্রাকিং থেকে বাঁচার চেষ্টা করি সেগুলোর চাইতেও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা‌। তাই একজন হ্যাকার যত বড়ই হ্যাকার হোক না কেন তাকে অবশ্যই খুঁজে বের করা সম্ভব। যদিও যারা ফ্রিতে ভিপিএন ব্যবহার করে তাদের ক্ষেত্রে নিজের তথ্য বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু যারা টাকা দিয়ে প্রিমিয়াম ভার্সন কিনে নিয়ে ব্যবহার করে তাদের তথ্যগুলো অনেকটা নিরাপদ থাকে ভিপিএন ব্যবহারে।

যদিও প্রিমিয়াম ভার্সন ব্যবহার করে যদি কোনো অপরাধ করা হয় সে ক্ষেত্রে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের কাছে তার তথ্য তুলে দিতে পারে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সময় তাদের তথ্য সবসময় এনক্রিপশন প্রক্রিয়ায় থাকে, যেখানে কেউ আড়িপেতে তার তথ্য নিতে পারেনা।

শেষ কথা

আপনি যদি আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সকল তথ্য এর গোপনীয়তা বজায় রাখতে চান তবে আপনি ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। যেটি এনক্রিপশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনাকে তথ্য সরবরাহ এবং আদান-প্রদান করে থাকে। যেখানে আপনার তথ্যগুলো কে কেউ আড়ি পেতে দেখতে পাবে না। তবে এখানে আপনি গুগল এবং ফেসবুকের মত প্রতিষ্ঠানগুলোর আড়ি পেতে থাকা রোধ করতে পারবেন না। তারা আপনাকে আপনার কুকিজ গুলো সংগ্রহ করে ব্যক্তিগত তথ্য অনুযায়ী বিজ্ঞাপণ অবশ্যই দেখাবে। এক্ষেত্রে ভিপিএন কোন কাজেই আসবে না। আমরা কেন বিজ্ঞাপণ দেখতে পাই সে নিয়ে করা আমার আগের একটি টিউন রয়েছে, আপনারা চাইলে সেটি দেখে আসতে পারেন। এখানে ক্লিক করে

ভিপিএন কি এবং কেন ব্যবহার হয় আশা করছি এ বিষয়ে আপনারা বুঝে গিয়েছেন। বন্ধুরা এই ছিল ভিপিএন নিয়ে করা আজকের টিউন। যদি এই টিউনটি আপনাদের কাছে ভাল লেগে থাকে তবে একটি জোসস করবেন। আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। দেখা হবে তবে পরবর্তী টিউনে আরো নতুন কিছু নিয়ে ইনশাআল্লাহ।

Level 12

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 333 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 60 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস