বর্ষাকালে পানিবাহিত রোগ

Level 6
merkating, pure water, House.21 Azampur kancha Bazer, Shah Kabir Mazar Rd, Dhaka 1230

বর্ষাকালে পানিবাহিত রোগ
=
বর্ষার সময়ে আমাদের থাকে অনেক রকম সমস্যা। বর্ষার পানির প্রবাহে অনেক ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার হলেও বৃষ্টিভেজা স্যাঁতসেঁতে কাপড়-চোপড়, ভেজা চুল, কাদায় নানা রকম রোগব্যাধির আশঙ্কা থাকে। বন্যায় বা ভারী বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে খুব সহজেই পানি দূষিত হয়ে যায়। আর পানি দূষণের কারণে মানুষ আক্রান্ত হয় পানিবাহিত নানা রোগে, যেমন পেটের অসুখ, ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস ও কৃমি সংক্রমণ।

ডায়রিয়া : বর্ষাকালে ডায়রিয়া হওয়ার মূল কারণ হলো দূষিত পানি ও খাদ্য গ্রহণ, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বসবাস, বাসি বা পচা খাবার খাওয়া। গ্রামাঞ্চল এবং বস্তি এলাকায় এ রোগের প্রকোপ বেশি হয়। ছোট-বড় সবারই হতে পারে। তবে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়। কারণ শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। প্রথম দিকে পেটে ভুটভাট শব্দ করে, অজীর্ণ দেখা দেয়, ক্ষুধা হয় না, খাবারে অনীহা থাকে। তারপর ঘন ঘন পাতলা পায়খানা শুরু হয়, বমি ভাব বা বমিও হতে পারে, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা প্রোটোজোয়া দ্বারা ডায়রিয়া হয়ে থাকে। ডায়রিয়া ও কলেরা কিন্তু এক নয়। সাধারণত রোটা ভাইরাস দ্বারা কলেরা হয়। কলেরা আক্রান্ত রোগী চাল ধোয়া পানির মতো অনবরত মল ত্যাগ করতে থাকে। ফলে রোগী দ্রুত পানিশূন্যতায় ভোগে। তাড়াতাড়ি চিকিৎসা না নিলে রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অনেক সময় কলেরা হলে এলাকায় মহামারী আকার ধারণ করে। ডায়রিয়া ও কলেরা উভয় ক্ষেত্রেই শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। ফলে রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে। সে জন্য সাথে সাথে খাবার স্যালাইন বা ঘরে বানানো স্যালাইন খাওয়া শুরু করতে হবে যাতে রোগীর শরীরে পানি শূন্যতা দেখা না যায়। আমাশয় হলে রোগীর তলপেটে ব্যথা হয়, বারবার অল্প অল্প করে দুর্গন্ধযুক্ত পিচ্ছিল পায়খানা হয়। রক্ত আমাশয় হলে পায়খানার সঙ্গে রক্ত মিশ্রিত থাকে, জ্বরও থাকতে পারে। এটা রোগীর জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থা। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর জন্য বিশুদ্ধ পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। বিশুদ্ধ পানির অভাব হলে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। ফুটানোর ব্যবস্থা না থাকলে ফিটকিরি বা পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি দিয়েও পানি জীবাণুমুক্ত করা যায়। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর খাবার স্যালাইন খেতে হবে। প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে।

টাইফয়েড : সাধারণত বর্ষাকালে টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপ বেশি থাকে। সালমোনেলা টাইফি জীবাণু দ্বারা পানি ও খাদ্য দূষিত হলে, সেই পানি এবং খাবার খেলে মানুষের টাইফয়েড জ্বর হয়ে থাকে। এ রোগের জীবাণু কোনো কোনো ব্যক্তির পিত্তরসে দীর্ঘ দিন ধরে উপসর্গহীন অবস্থায় থাকতে পারে। এ জীবাণু পিত্তরসের সাথে ক্ষণে ক্ষণে অন্ত্রে নিঃসৃত হয় এবং পরিশেষে মলের সাথে বেরিয়ে যায়। এভাবেই এরা পানি ও খাদ্যকে দূষিত করে। যেখানে স্যানিটেশন প্রণালী যত ভালো এবং পানি ও খাবার যত বিশুদ্ধ সেখানে টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপ তত কম। টাইফয়েড হলে রোগীর শরীরে অনবরত জ্বর থাকে, আস্তে আস্তে জ্বরের মাত্রা বাড়তে থাকে, তার সাথে বমি, পাতলা পায়খানা ও কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, কাঁপুনিও থাকে। নাড়ির গতি কমে যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় এবং শরীরের ওজন কমে যায়। এ রোগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হবে। গা ব্যথা ও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। জ্বরের মাত্রা বেশি হলে পুরো শরীর ঠা-া পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে, গায়ের হালকা কাপড় পরিধান করতে হবে। টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে সর্বদা বিশুদ্ধ খাবার পানি গ্রহণ করতে হবে, বাসি, পচা দুর্গন্ধ খাবার বর্জন করতে হবে, স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করতে হবে।

হেপাটাইটিস : এটি এক ধরনের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত লিভারের অসুখ। বিভিন্ন ধরনের হেপাটাইটিসের মধ্যে হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং হেপাটাইটিস ‘ই’ সাধারণ বর্ষাকালে বেশি হয়। কারণ এ দু’টি ভাইরাস পানিবাহিত ভাইরাস অর্থাৎ দূষিত পানি ও পানি দ্বারা তৈরি অন্যান্য পানীয় এবং দূষিত খাবার ইত্যাদির মাধ্যমে এ ভাইরাস দু’টি ছড়ায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছিদ্রযুক্ত পানির পাইপে বাইরের নোংরা পানি মিশেও এ রোগের জীবাণু বহন করে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং অস্বাস্থ্যকর ব্যক্তির মলে এ ভাইরাস থাকে। ছোট-বড় সবাই এ ধরনের জ-িসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে তরুণ-তরুণীরা বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। কারণ তারা হোটেল-রেস্তোরাঁয় অধোয়া গ্লাসে পানি, কোল্ড ড্রিংকস, আইসক্রিম, শরবত, নানা রকম খাবার খায়। এ রোগে প্রস্রাব হলুদ বর্ণ ধারণ করে, চোখের সাদা অংশ হলদেটে দেখা যায়, খাবারে অরুচি হয়, বমি বমি ভাব হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, আপনাতেই রোগীরা নিরাময় লাভ করে। তবে জটিলতাগুলো মারাত্মক, রোগীর মৃত্যু হতে পারে। সচেতনতার অভাবই জটিলতার কারণ। ঝাড়ফুঁক, পানিপড়া, মালাপড়া এসব হাতুড়ে চিকিৎসা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক অথচ এগুলো মারাত্মক আক্রান্ত জন্ডিস রোগীকে রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব করে জটিলতায় জড়িয়ে দেয়।

জন্ডিস রোগীর প্রচুর বিশ্রামের প্রয়োজন। এসব রোগীর সব ধরনের পরিশ্রমের কাজ করা নিষিদ্ধ। সহজ প্রাচ্য ও সহজলভ্য খাবার গ্রহণ করা উচিত। যেসব খাবারে রোগীর রুচি হয় এবং খেলে হজম করতে পারে সেগুলো খাওয়া উচিত। যদি রোগীর অতিরিক্ত বমি হয় এবং ভীষণ অরুচির কারণে ন্যূনতম খাবার খেতে না পারে তা হলে শিরাপথে ডেকট্রোজ স্যালাইন দিতে হবে।

এ ধরনের হেপাটাইটিস প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হচ্ছে ভাইরাসের সংস্পর্শে না আসা অর্থাৎ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং বিশুদ্ধ খাবারের জোগান দেয়া। আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখা, পয়ঃনিষ্কাশনের উন্নত ব্যবস্থা করা বা স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করা, বিদেশ ভ্রমণের সময় বিশুদ্ধ জীবাণুমুক্ত পানি পান করা প্রভৃতির মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

কৃমি সংক্রমণ : বর্ষাকালে কৃমি সংক্রমণ একটি সচরাচর ব্যাপার। যেখানে স্যানিটেশন পদ্ধতি ভালো নেই সেখানে মল বর্ষার পানিতে মিশে একাকার হয়ে যায়। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কৃমি সংক্রমণ বেশি হয়। কৃষি সংক্রমিত ব্যক্তির রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। পেটে নানা রকম সমস্যা হয়। পেটে ব্যথা, হজমে গ-গোল, খাবারে অরুচিভাব, ক্ষুধামন্দা, বমি ভাব ও মলদ্বারে চুলকানি হয়।

পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে করণীয়
-সব সময় খাবারের আগে এবং মলত্যাগের পর সাবান বা ছাই দিয়ে হাত ভালো করে ধুয়ে নেয়া। শিশুকে খাওয়ানোর আগে এবং মলত্যাগের পরে একই নিয়মে পরিষ্কার হওয়া বাঞ্ছনীয়।
-গোসল কিংবা ব্যবহৃত কাপড়- চোপড়, গৃহস্থালি জিনিসপত্র ধোয়া- মোছার জন্য পরিষ্কার পানি ব্যবহার করা।
-স্বাস্থ্যসম্মত সঠিক পদ্ধতিতে পয়ঃনিষ্কাশন করা বা স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করা। যেখানে সেখানে মলত্যাগের অভ্যাস বর্জন করা, খালি পায়ে মলত্যাগ করতে বা বাথরুমে না যাওয়া, সব সময় জুতা বা স্যান্ডেল পরার অভ্যাস করা।
-সবসময় পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত পানি পান করা। খাবার পানি বিশুদ্ধ না হলে বা টগবগ করে ফুটিয়ে নেয়া। ফুটানোর ব্যবস্থা না থাকলে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করা বা ফিটকিরি ব্যবহার করে পান করা।
-ঘরের বাইরে খেতে হলে তরল খাবারে সতর্ক থাকা।
-সর্বদা টাটকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা। প্রয়োজনে খাবার পানীয় ঢেকে রাখা। বাসি, দুর্গন্ধ খাবার না খাওয়া।

-ডা: ওয়ানাইজা রহমান
সহযোগী অধ্যাপিকা, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ। https://www.facebook.com/Unofficial-pure-water-2061731420715740/

Level 6

আমি মামুন রহমান। merkating, pure water, House.21 Azampur kancha Bazer, Shah Kabir Mazar Rd, Dhaka 1230। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 5 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 108 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 13 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

https://purewater.com.bd/


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস