ফেইসবুক, ট্যুইটার, ইউটিউব যেভাবে ভূমিকা রাখতে পারে আপনার ক্যারিয়ারে

আমরা বেশিরভাগ লোকই মনে করি ফেইসবুক, ট্যুইটার, ইউটিউব এসব কেবল সময় নষ্ট করার উৎস মাত্র। কিন্তু মানেন তো যে প্রযুক্তির ব্যবহার নিজের উপর নির্ভর করে। এই ফেইসবুক ব্যবহার করেই একজন পড়াশোনার পিছনে কম সময় দিচ্ছে, আবার কেউ গ্রুপে বি সি এস প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কেউ অনলাইন শপ এর পেইজ খুলে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। আবার কোনো গ্রুপ থেকে কারো রক্ত ম্যানেজ হচ্ছে। জীবন বাঁচছে। তাই ব্যবহারটা একদমই নিজের উপর। তবে আপনার ক্যারিয়ার গঠনে এগুলো যেসব ভূমিকা রাখতে পারে আজ সেসবই ব্যাখ্যা করবো।

হ্যাঁ। আপনি সোশাল মিডিয়াগুলোকে আপনার ক্যারিয়ার গঠনের কাজে পরিণত করতে পারেন। ফেইসবুক, ট্যুইটার, ইউটিউব দেখলেই বুঝতে পারবেন যে কতোটা ভীড় এখানে। তাই এত সব ভীড়ের মাঝে নিজের যোগ্যতা অনুসারে কাজের কিছু খুঁজে বের করা বেশ কঠিনই বটে। কিন্তু শুধুমাত্র কিছু বিষয় মাথায় রেখে কাজ করলে আপনিও এখানে নিজেকে একজন এক্সপার্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করাতে পারেন।

আর যেটা আপনার ক্যারিয়ার গঠনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ, একটা বিষয় আপনার সবসময়ই মাথায় রাখতে হবে। আপনি দক্ষ কর্মী না হলে আপনার ক্যারিয়ার ভালো হবার কোনোরকম সম্ভাবনা নেই। কারণ, সবাই আপনার কাজ দেখবে। এর বেশি কিছু না। তাই, কিছু কাজে আপনাকে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে। আর একটা বিশ্বাস সবসময় মনে লালন করবেন যে, যদি আপনি কোনো কাজে দক্ষ হন, তাহলে একদিন না একদিন সেই কাজ আপনার জন্য কোনো না কোনো সুফল বয়ে আনবেই।

তো চলুন, দেখে নেয়া যাক আপনি সোশাল মিডিয়াগুলোকে কীভাবে নিজের ক্যারিয়ারের গঠনের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

টুইটারের টুইট গুলো চেক করা

ক্যারিয়ার গঠনের জন্য সবচেয়ে সুপরিচিত প্লাটফর্ম লিংক্‌ড ইন (LinkedIn) হলেও এটিই মাত্র একটি অপশন নয়। অনেকেই ট্যুইটারের বদৌলতে অনেক বড় বড় জায়গায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। আপনার কোনো সেলিব্রিটিদের প্রোফাইলে পড়ে থাকার দরকার নেই। হাজার হাজার জনকে ফলো করে শুধু ফলোয়িং লিস্টটা বাড়িয়েই লাভ নেই। আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে সঠিক কানেকশনটাই বেছে নিতে হবে।

হিথার মার্টিন ছিলেন কলেজের একজন সামান্য ক্রীড়াবিদ। কিন্তু তার প্রবল ইচ্ছা ছিল সে একদিন ন্যাশনাল বাস্কেটবল এসোসিয়েশন (এন বি এ)-তে কাজ করবে। একদিন সন্ধ্যায় তিনি ট্যুইটারের আলোচনায় বোস্টন কেলটিক এক্সিকিউটিভের নজর কাড়লেন।

এরপর তার সাথে ফোনে কথাও হলো। যার ফলে একটা দৃঢ় প্রফেশনাল সম্পর্ক তৈরি হলো। আর এই কানেকশনের কারণেই জমা হওয়া হাজার হাজার সিভি'র মধ্য থেকে তাকেই বেছে নেয়া হলো। এভাবেই মার্টিন এন বি এ-তে তার জীবনের প্রথম জব শুরু করলেন।

ট্যুইটারের আলোচনাগুলো মোটেই কোনো সাধারণ মূল্যহীন আলোচনা নয়। অনেক বড় বড় লোক একটা বিষয়ের প্রতি লিখতে থাকেন। মতামত প্রকাশ করতেই থাকেন। মডারেটর প্রশ্ন বা আলোচনার বিষয় ছোঁড়েন। আর লোকজন সেটার জন্য ফিডব্যাক দিতে থাকে। একটা নির্দিষ্ট হ্যাশট্যাগে চলতে থাকে আলোচনা। এ পর্যায়ে আলোচনা থেমেও যায়। পাওয়া যায় অনেক অনেক মতামত।

আর সার্চ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটার উপরই আপনার কাঙ্ক্ষিত প্ল্যাটফর্ম খুঁজে বের করার সম্ভাবনা নির্ভর করে। আপনার আগ্রহের ক্ষেত্র অনুযায়ী ট্যুইটারে সার্চ করুন। অনেক অনেক নেটওয়ার্ক পেয়ে যাবেন। শুধু থাকতে হবে আপনার একটু ধৈর্য্য।

ইউটিউবের মাধ্যমে আপনার শখকে পরিণত করুন দক্ষতায়

অ্যাশলে রুইজ, বিখ্যাত সফল মিউজিক ব্লগ 'দ্যা মিস রুইজ'-এর প্রতিষ্ঠাতা। এই মহিলা একটি ইউটিউব চ্যানেল চালু করেন। একসময় দেখা গেলো এর সুবাদে তিনি তার নার্সিং পেশা বাদ দিয়ে 'পাবলিক রিলেশন্‌স অ্যান্ড মার্কেটিং'-এ মনোনিবেশ করেছেন।

তার ভাষায়,
"ক্যামেরার সামনে সবসময়ই আমার বেশ ভালো লাগতো। তাই আমি ভাবলাম, চেষ্টা করে দেখি না কেন আমি আমার আইডিয়াগুলো দিয়ে কী করতে পারি"।
খুব বেশিদিন লাগে নি। ইউটিউব চ্যানেল খোলার কিছুদিনের মধ্যেই ২০১২ সালের দিকে তিনি তার কাজের জন্য একজন ভিডিওগ্রাফার পার্টনার খোঁজেন যে তার নিজের দক্ষতা বাড়ানোর কিছু উপায় খুঁজছিলো তার নিজের পোর্টফলিও তৈরির জন্য।

তো এই ভিডিওগ্রাফার রুইজের সে সমস্ত ভিডিওগুলো শেয়ার করতেন যার ফলে লোকজন তার প্রোফাইলগুলো বেশি দেখতে লাগলো। এই আইডিয়াটা এত ভাল কাজে দিলো যাতে করে এর কিছুদিন পর কিছু কাপড়ের কোম্পানিও তার সাথে পার্টনারশিপে আসতে চাইলেন তাদের কাপড়ের বিজ্ঞাপণ করতে। অর্থাৎ রুইজের কাজ ছিল তাদের কোম্পানির কাপড়গুলো পড়ে ভিডিও-তে আসা বা ফটো তোলা।

তবে শিক্ষাটা এটা না যে আপনি এতকিছু করবেন ইউটিউব সেলিব্রিটি হবার জন্য। আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে আপনার ক্যারিয়ার তৈরির জন্য। এভাবে কাজ করতে পারলে একসময় আপনার শখই হয়ে উঠবে আপনার জব স্কিল। রুইজের শেষ কথাগুলো বেশ মজার ছিল,
"অন্যান্যদের থেকে আমি নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরতে পেরেছি একটি মাত্র কারণে আর সেটা হলো, আমি অন্যান্য ব্র্যান্ডকে প্রমোট করেছিলাম যেগুলোর কারণে পরবর্তীতে  আমি নিজেও প্রমোট পেয়েছি”।
যদিও বিষয়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল তবুও রুইজ তার ব্লগের সফলতার পথে এগোন এইভাবে। প্রথমে তিনি মিউজিকের বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতেন। এরপর যখন তিনি বেশ পরিচিতি পেতে লাগলেন, তখন তিনি বিভিন্ন শিল্পীদের ইন্টারভিউ নেয়া শুরু করলেন তার ইউটিউব চ্যানেলে। এভাবেই তিনি সফলতার দেখা পেয়েছিলেন।

চ্যানেল চালু করার কয়েক মাসের মধ্যেই রুইজ একটা বড় ইন্টারভিউ অনুষ্ঠান করলেন 'দ্যা ফ্রে' ব্যান্ডের আইজ্যাক স্লেড এর সাথে। যেটা তার ক্যারিয়ারকে একদমই বদলে দিলো। এরপর তার আর কোনোদিকে তাকাতে হয় নি। শুধু তাই নয়, শুধুমাত্র রান্নার ভিডিও আপলোড করে বিশ্বের দরবারে নিজেকে তুলে ধরেছেন এমনও অনেক মানুষ আছেন। যারা তাদের শখকে তাদের দক্ষতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছেন।

রুইজ কিন্তু আসলে ব্লগার বা মিডিয়া হোস্ট কিছুই হতে চান নি কখনও। কিন্তু তার অভিজ্ঞতাগুলোই তাকে এ জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। আজ তিনি হলেন 'জিমার্‌সন অ্যান্ড কব্‌' এর মার্কেটিং ম্যানেজার। তিনি বলেন যে তার এই ব্লগিং অভিজ্ঞতা ও ইউটিউব পারসোনালিটি তাকে শিখিয়েছে কীভাবে কোয়ালিটিসমৃদ্ধ কন্টেন্ট তৈরি করা যায়। আসলে যেসমস্ত বিষয়ে তিনি কখনও আগ্রহ প্রকাশ করেন নি সেসব বিষয়ই তাকে শেষ পর্যন্ত আপন করে নিয়েছে।

ফেইসবুকে ব্যবসার জন্য ক্লায়েন্ট খোঁজা

সবার জন্য ফেইসবুক শুধুমাত্র আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যোগাযোগের একটা ভাল মাধ্যম হলেও ব্যবসায়িক দিক থেকে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ক্লায়েন্ট খোঁজার জন্য ফেইসবুক এক বিশাল মাধ্যম। আপনার একটা ফেইসবুক পেইজ আছে। কিন্তু আপনি নিয়মিত সেসব গ্রুপ চেক করেন না যেখানে আপনি আপনার ক্লায়েন্ট বা গ্রাহকদের পেতে পারেন।

অনেকেই আছেন যারা ফেইসবুক থেকেই তাদের শিংহভাগ ক্লায়েন্ট পেয়ে থাকেন। আর তা কেবলমাত্র একটি ফেইসবুক গ্রুপ থেকেই।  আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ফিল্টার সার্চ এর মাধ্যমে আপনি আপনার পছন্দের গ্রুপগুলো খুঁজে নিতে পারবেন যেখানে আপনার ব্যবসার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্লায়েন্ট পাবেন। আর গ্রুপের বর্ণনা অনুযায়ীও আপনি আপনার মনোনীত গ্রুপ খুঁজে পেতে পারেন।

আপনি যদি অনেকগুলো গ্রুপের মেম্বার হন তাহলে প্রতিটা গ্রুপেই ঢুকুন। সেখানকার আলোচনাগুলো দেখুন। প্রত্যেকটা গ্রুপের নিয়ম মেনে আপনি চলতে থাকুন। আলোচনা, পর্যালোচনা করতে থাকুন। অনেক গ্রুপে নিজের ইচ্ছা, আইডিয়া, অজানা বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করুন। অবশ্যই আপনি সেখান থেকে সুবিধা পাবেন।

আমি এটাও লক্ষ করেছি যে অনেকে ফেইসবুকে সাইন আপ করে শুধুমাত্র তার ব্যবসায়িক প্রয়োজনে। সে তার গ্রুপে লেখালেখি করে। তার বিজনেস এর মার্কেটিং এর জন্য সে ফেইসবুক লাইভে আসে। অনেকে পেইজে লেখে। সবগুলো প্রায় একই রকম ফলাফল দেয়।

আপনি যদি আপনার ক্যারিয়ারের জন্য লাইভ ভিডিও ব্যবহার করেন, তাহলে আপনি নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করুন যে আপনি সে বিষয়ে দক্ষ। আর সেটা কীভাবে? কিছু ছোট ছোট কাজ শিখিয়ে বা মজার কিছু করে বা বেশ দারুণ রকমের কিছু খবর দিয়ে।

এটা কোনো বিষয় না যে আপনি কোন্‌ বিষয়ে মনোযোগী হবেন। ট্যুইটারের আলোচনায় আজ থেকেই শরীক হয়ে যান। ফেইসবুক লাইভে আজ থেকেই আসা শুরু করুন। সোশাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে নিজের একটা আসন তৈরি করুন। কিছু অডিয়েন্স তৈরি করুন। নেটওয়ার্ক তৈরি করুন। মানুষকে নতুন কিছু শিখান, মানুষের উপকার হয় এমন কিছু করুন, তাহলই আপনি তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন। আর এভাবেই আপনি আপনার নিজের ক্যারিয়ারকে পরিবর্তন করতে পারবেন।

পরিশেষে, টেকটিউনস হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার এক সুবিশাল প্ল্যাটফর্ম। প্রতিনিয়তই থাকবেন নতুন নতুন জ্ঞানের মধ্যে। জানবেন অজানাকে। তবে হ্যাঁ। শুধু জেনেই বসে থাকবেন না। এই জ্ঞানগুলো ছড়িয়ে দিন তাদের নিকট যাদের কাছে এই টিউনগুলো পৌঁছানো সম্ভব হয় না। জ্ঞান নিজের কাছে রাখার জিনিস না। ছড়িয়ে দিন আশেপাশে যারা আছে সবার মাঝে। প্রযুক্তিকে ভালবাসুন, প্রযুক্তির সাথে থাকুন। টেকটিউনসের সাথে থাকুন।

আজকের মতো এ পর্যন্তই। সামনে আবারও হাজির হবো নতুন কোনো তথ্য নিয়ে। আর টিউনটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না। টিউন বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে টিউমেন্ট বক্সে প্রশ্নটি করুন। এছাড়াও ফেইসবুকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

ফেইসবুকে আমি: Mamun Mehedee

Level 2

আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস