ভেজাল এবং নকল পণ্য দ্রব্যে সয়লাব যখন পুরো দেশ, তখন আঁশার প্রদীপ হাতে জ্বলে উঠার সময় এখনই। প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণ প্রজন্ম কি একবার সাড়া দেবে ?

প্রতিদিন আমার সকাল হয় নতুন উদ্দমতা নিয়ে। দেশের জন্য, চারপাশের মানুষ গুলোর জন্য নতুন কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে কর্মযজ্ঞ শুরু করি। আর দিন গুলো শেষ হয় একরাশ হতাশা, ক্লান্তি আর অনিশ্চয়তা নিয়ে। আমার মনে হয় তোমাদেরও এমনটাই হয়। করণ আমিতো তোমাদেরই একজন। আমিও তোমাদের মতো তরুণ প্রজম্মের প্রতিনিধিত্ব করি। তোমরা যেমন তোমাদের অর্জন,দক্ষতা আর জ্ঞানের গভীরতা দিয়ে বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চাও আমরা বাঙ্গালী বীরের জাতি, চাইলে সবকিছু জয় করতে পারি। তোমাদের যেমন প্রতিটি রক্তবিন্দু কথা বলে, প্রতিটা শিরা উপশিরায় প্রবাহিত হয় দেশের জন্য ভালোবাসার অনুভূতি, আমারও ঠিক তাই। ইতিবাচক মানষিকতার যত মানুষ আছে, আমার মনে হয় সবাই এমনটাই চিন্তা করেন।

আজ আমি সত্যিই উদ্বিগ্ন কারণ আমি জানি না আজ একটু পরে যে খাবরটা আমি বা তুমি খাবো তাতে কোন বিষ থাকবে কিনা, কোন ক্ষতিকারক কেমিক্যাল থাকবে কিনা।

আমরা একটা শান্তিপ্রিয় জাতি, তবে কেন এমনটা ঘটে?

শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে আমাদের বেশ শুনাম রয়েছে। একে অপরের বিপদে সহযোগিতা করা বাঙ্গালীদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু আমরা কি সেই অবস্থান থেকে আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছি? বার বার এই প্রশ্নটা মনের কোণে উকি দেয়।

আজ একটা নিউজ পড়ে চোখটা আটকে গেল "ডিটার্জেন্ট, শ্যাম্পু আর গুড়ো দুধের সংমিশ্রণে তৈরি করা হচ্ছে নকল তরল দুধ"। সত্যিই  অসাধারণ মেধা দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা আমাদের,এ ব্যপারে কৃতজ্ঞতা জানাতেই হয়। কিন্তু সেই মেধার অপপ্রযোগ করে আমরা নিজেরাই নিজেদের নিশ্বেষ করে দিচ্ছি তিলে তিলে।

 

ওহে নকল পণ্য উৎপাদনকারী তুমি কি তোমার পরিবার আর অত্মীয় স্বজনদের তোমার নকল জিনিসের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে পারছো?

সমাজে আমরা কেউই স্বয়ংসম্পন্ন নই। যদি আমি চাল উৎপাদন করি তাহলে ডাল আর তেল কিনতে হয় অন্যদের কাছ থেকে। আমরা প্রত্যেকে যদি ভেজাল দেই, নকল পণ্য তৈরি করে বিক্রি করি তাহলে আমি আমার ভেজাল/নকল পণ্য নিজে ব্যবহার না করলেও অন্য জনের ভেজাল/নকল পণ্য কিন্তু ব্যবহার করছি। বিষয়টা এমন আমরা ভাগেযোগে ভেজাল/নকল পণ্য  তৈরি করছি আবার নিজেদের জিনিস নিজেরাই খাচ্ছি।

একটা প্রেক্ষাপট চিন্তা করেন। নিজেকে একজন বড় মাপের কৃষক হিসেবে চিন্তা করেন। আপনার নিজের জমিতেই ধান,গম,মাছ সব ধরণের খাদ্য তৈরি হয়। আপনার পরিবারের খাবার জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে বিষমুক্ত টাটকা খাবার এবং শবজি তৈরি করেন আর বাজারে বিক্রি করার জন্য কেমিক্যাল, সার, কিটলাশক ভেজাল দিয়ে  তৈরি করেন।  যেহেতু গ্রামের বড় পরিবার, ঈদের দিন আপনার অনেক মানুষকে আপ্যায়ন করতে হয়। আপনি নিজেদের পরিবারের সদস্যদের জন্য আলাদা করে ভেজাল মুক্ত জিনিস রান্না করলেন আর অতিথিদের সব ভেজাল খাওয়ালেন। সবাই তৃপ্তি সহকারে খেয়ে আপনার প্রশংসা করে চলে গেলেন। আপনিও ভেজাল মুক্ত খাবার খেয়ে নিশ্চিন্ত ঘুমাচ্ছেন।

কিন্তু মহাশয় এই একই কাজ হয়তো আপনার মতো সবাই করেছে, একবার ভেবে দেখেছেন। আপনি হয়তো জানেনই না আপনার মেয়ে -জামাই এমনি কোন এক অনুষ্ঠানে তৃপ্তিমনে খেয়ে এসছেন। আপনার ছেলেটি আপনাকে না জানিয়েই বন্ধুদের নিয়ে আজ বড় রেস্ট্রুরেন্টে মজা করে মরা মুরগির চিকেন ফ্রাই আর ভেজাল ডিংকস খেয়ে এসেছে। আপনি হয়তো ভুলেই গেছেন গত ৬ মাস আগে আপনার প্রাণপ্রিয় একমাত্র ছোট বোনের একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে। আজ তার বাবা নামি দামি ব্রান্ডের ভালো মানের তরল দুধ মনে করে "ডিটার্জেন্ট, শ্যাম্পু আর গুড়ো দুধের সংমিশ্রণে তৈরি করা নকল দুধ কিনে এনেছে "মেয়েকে খাওয়াবে বলে। আপনি বড় ব্যবসায়ী কয়াটা দিক সামলাবেন। আমরা মানুষ তো।

আপনাকে কানে কানে বললাম আপনার মেয়ে,মেয়র জামাই, আপনার ছেলের কথা। ওরা তো যেহেতু খেয়ে দেয়ে এসেছে কিছুই করার নেই উপরআলা দেখবেন ওদের। তো এখন কি ছুটলেন আপনার বোনের বাড়ির দিকে ? তাকে তো থামাতে হবে নাকি, মেয়েটাকে তো আর মেরে ফেলা যায় না।

আর একটা নিউজ দিই, পথের মধ্যে আপনার  বেয়াই বেয়ান আসছেন। ওনারা কিন্তু ৪-৫ কেজি মিষ্টি নিয়ে আসছেন। ওগুলো কিন্তু বেশ দামি আর খেতে সুস্বাদু, যে কেউ দেখলেই খেতে চাইবে। কিন্তু জানেনকি ওগুলোর ছানা তৈরি করার সময় সাদা টিস্যু পেপার মিশিয়ে দেয়া হয়েছে? আপনি গেলেই কিন্তু বাড়ি বাচ্চারা ওগুলো খেয়ে নেবে, এমন কি আপনার প্রাণপ্রিয় সহধর্মীনিও বাদ যাবেন না।

বাসায় ফেরার সময় পাশের দোকান থেকে ওষুধ গুলো কেনার কথা কিন্তু ভুলবেন না। আপনার গিন্নির স্বাসকষ্ট, আপনার ডায়াবেটিস নিয়মিত ওষুধ পেটে না পড়লে মহা ঝামেলা। এই তো গত মাসে আপনার গিন্নিতো মাঝ রাতে প্রায় চলেই গেছিলেন  ওপরআলা যেন নিজে হাতে বাঁচিয়েছিলেন মনে আছে আপনার?

এমনই অবস্থা আমাদের সমাজের।

প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণ প্রজন্মের ধারক বাহক হিসেবে আমাদের কি কিছুই করার নেই?

যারা খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে তারা এই সমাজেরই মানুষ, হয়তো আমাদেরই আপনজন। আমরা তাদের শ্রদ্ধা বা সম্মানও করি। অনেকেই জেনে বুঝে মুনাফা লাভের আশায় কাজগুলো করছেন,আবার অনেকেই করছেন না বুঝে। আমার কাছে মনে হয়েছে না বুঝে ভুল করা মানুষের সংখ্যাই বেশি। মুনাফা লাভের ব্যপারটা কম বেশি সবাই জানেন কিন্তু এর ভয়াবহ প্রভাব এবং সেই প্রভাব থেকে যে পরিবারের সদস্যরাও বাদ যান না তা অনেকেরই অজানা।

আমি আজ যে গল্পটা শেয়ার করলাম এমন কিছু বিষয় তাদের সামনে তুলে ধরা হলে আমর মনে হয় সবাই বুঝবে। আমি এমনও মানুষ দেখেছি ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন, আসলে তার ক্ষেতে কোন পোকা নেই, প্রশ্ন করলে বলেন এটা দিলে ফসল ভালো হবে, টিভিতে দেখেছেন, বাজারের সারের দোকান থেকে দিতে বলেছেন। উনি জানেনও না এটার ক্ষতিকর প্রভাব কি? অনেকেই টাটকা শবজি বা ফলে ফরমালিন বা সংরক্ষণের জন্য কেমিক্যাল ব্যবহার করেন কিন্তু জানেন না এটা দিলে কি হয়? এর ক্ষতিকর প্রভাব কি? প্রশ্ন করলে বলেন এটা দিলে বেশি দাম পাওয়া যায়, মহাজনে দিতে বলেন।

আমরা কি করতে পারি?

আইন করে এগুলো এড়ানো যাবেনা। প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি করা, গবেষণা এবং প্রচার প্রচারণা।

১. যারা ভেজাল দেয় এরা আমার আপনারই পরিবারের সদস্য, তাদের বোঝাতে হবে উপযুক্ত যুক্তি সহকারে এবং তথ্য সহকারে এবং সেই সাথে বিকল্প পন্থা তাকে জানিয়ে দিতে হবে।

২. আমরা যারা প্রযুক্তিপ্রেমী,সৌশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয়, জোড় প্রতিক্রিয়া জানানো যেতে পারে। আলোচনা করে গরম করে ফেলা যেতে পারে যাতে সবাই ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়, অবশ্য সেটা মারমার কাটকাট পদক্ষেপ নয়।

৩. যেহেতু আমরা সবাই ভুক্তভুগী তাই কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সমূহ থেকে অর্গানিক ফুড তৈরির কলাকৌশল, জৈব্য সার তৈরি ও ব্যবহার উপকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের কৃষকদের শেখাতে পারি।

৪. স্কুল/কলেজে কিছু সচেতনতা মূলক প্রোগ্রাম করা যেতে পারে।

৫.চায়ের দোকান হাটবাজারে আমরা যখন গল্প করি এই বিষয় গুলো শেয়ার করা যেতে পারে।

৬. আমরা প্রায়ই ফটোশপে এডিট করে বা ইলাস্ট্রেটরে কার্টুন তৈরি করে সৌশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করি, এক্ষেত্রে বিষয়টি বেছে নেয়া যেতে পারে।

৭.গ্রামে অসংখ্য এন.জি.ও কাজ করে সাদের সাথে মিলে কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

৮.জেলা প্রসাশনের সাথে যোগাযোগ করে কিছু স্থানীয় সচেতনতা মূলক পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

৯.রিসার্চ করার মতো অর্থ থাকলে বা প্রকল্প পরিচালনা করার মতো সুযোগ থাকলে, গ্রামের কৃষকদের নিয়ে অর্গানিক ফুড উৎপাদনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

১০. কৃষকদের সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ প্রদান করে এবং মধ্যস্থতাকারীদের হটিয়ে সরাসরি দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌছানোর ব্যবস্থা করা গেলে এর প্রভাব কমে আসবে।

১১. সরকারের a2i এর ইনোভেশন ফান্ড বা BCC এর ইনোভেশন ফান্ড এর জন্য নতুন কোন আইডিয়া শেয়ার করা যেতে পারে। ফান্ডিং পেলে প্রকল্প নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।


আর মাথায় আর কিছু আসছে না। আপনারাও একটু ব্রেন ওয়ার্ক করেন। আর আপনাদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী আছে কিউরিয়াস সেভেন। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে ভালো কিছু হবেই।


কোন বিষয় আমাকে জানানোর জন্য টিউমেন্ট করতে পারেন এর পাশাপাশি আমাকে ফেসবুকে ম্যাসেজ দিতে পারেন। আপনার মতামত, জিজ্ঞাসা, সবার সাথে শেয়ার করুন। প্রতিদিন কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করুন,টিমওয়ার্ক করুন, নূন্যতম প্রতিদিন দুই ঘন্টা করে কোডিং করুন। আপনার ইচ্ছা আর সক্রিয় অংশগ্রহণই আপনাকে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ করে তুলবে।

আজ এ পর্যন্তই। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। শুভকামনা রইলো।

Level 2

আমি অসীম কুমার পাল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 147 টি টিউন ও 469 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 17 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি অসীম কুমার পাল। ইলেকট্রনিক্স এবং ওয়েব ডিজাইনকে অন্তরে ধারণ করে পথ চলতেছি। স্বপ্ন দেখি এই পৃথিবীর বুকে একটা সুখের স্বর্গ রচনা করার। নিজেকে একজন অতি সাধারণ কিন্তু সুখী মানুষ ভাবতে পছন্দ করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

খুবই সন্দর পোষ্ট