আপনার আপলোডকৃত ফটো বা ভিডিও’র মালিক আসলে কে!

টিউন বিভাগ প্রযুক্তি কথন
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

এই প্রশ্নটি সময়ের সাথে সাথে বারবারই মানুষের মনে আসে। আর সেটা হলো আপনি যখন সোশাল মিডিয়ায় কোনো ফটো বা কোনো স্ট্যাটাস আপডেট করেন, তখন সেটার কপিরাইটের মালিক কে? ফেইসবুক বা টুইটার কি আপনার ফটো দিয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে? চলুন জানবো সে সম্পর্কেই।

ফটো, ভিডিও বা টেক্সট-এর কপিরাইটের মালিক কে?

কেউ কোনো ফটো তুললে বা ভিডিও তৈরি করলে সে-ই প্রকৃতপক্ষে এর মালিক। কোনো কথার মালিক সে-ই, যে কথাটি বলেছে। সোজাভাবে বলতে গেলে, যদি আপনি অরিজিনাল কোনো স্ট্যাটাস বা ফটো বা ভিডিও আপলোড করেন, তাহলে আপনিই সেটার কপিরাইটের মালিক।

কিন্তু আপনি যদি অন্য কারো ফটো বা ভিডিও অনলাইনে প্রকাশ করে থাকেন, তাহলে আপনি এর কপিরাইটের মালিক নন। কারণ, মালিকানা আপনি তখনই পাবেন যদি আপনিই তা তৈরি করে থাকেন।

এক কথায়, অনলাইনে আপনার আপলোড করা কন্টেন্ট এর কপিরাইটের মালিক আপনিই।

কপিরাইট ও লাইসেন্স প্রকাশ এক জিনিস নয়

এই মূল পার্থক্যটা আমার আপনার সকলেরই বোঝা উচিত। কপিরাইট হলো মালিকানা। আপনার তৈরিকৃত কোনো কন্টেন্ট এর উপর যে মালিকানা আছে এটি সেটিই প্রকাশ করে থাকে। এই মালিকানার ক্ষমতা নিয়ে আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন কোথায় এবং কীভাবে আপনি আপনার কন্টেন্ট প্রকাশ করবেন। আপনি নিজেও প্রকাশ করতে পারেন, এমনকি আপনি অন্য কাউকে প্রকাশের জন্য লাইসেন্সও দিতে পারেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার ইচ্ছা থাকলে Copyright.gov এই ওয়েবসাইটে যান।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এই বিষয়গুলো এভাবেই চলতে থাকে। আপনি যেহেতু আপনার কন্টেন্ট এর কপিরাইটের মালিক, তাই আপনার অবশ্যই অধিকার আছে সেগুলো কোথায় কীভাবে প্রকাশ করবেন তা নিয়ন্ত্রণ করা।

সোশাল নেটওয়ার্কগুলো কী করতে পারে?

আপনি যখন কোনো সোশাল নেটওয়ার্কে সাইন আপ করেন, আপনাকে কিছু নিয়ম-নীতিমালার সাথে সম্মতি প্রকাশ করতে হয়। আমরা কেউই পড়ি না সেটা। না পড়েই চেক মার্ক দিয়ে পরবর্তী ধাপে যাই। কিন্তু এটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলে শেষ করা যাবে না। উদাহরণস্বরুপ: ফেইসবুকের নিয়ম-নীতিমালাগুলো দেখুন।

এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা হলো আপনি ফেইসবুককে আপনার ফটো নিয়ন্ত্রণের প্রায় সকল ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছেন। একইরকমভাবে আপনি ইন্সটাগ্রাম, টুইটার বা অন্যান্য সবকিছুতেই এসব নীতিমালা পাবেন। এমনকি টুইটারে আপনার টুইটকে অন্য ভাষায় প্রকাশ করার নীতি রয়েছে। তাই কোনো সাইট যদি আপনার ফটোসহ টুইটকে প্রকাশ করে তাহলে এটা কোনো ব্যাপার না।

নন-এক্সক্লুসিভ, ট্রান্সফারেবল, সাব-লাইসেন্সেবল, রয়েলিটি-ফ্রি বলতে আসলে কী বোঝায়?

সাধারণত, ফেইসবুক, টুইটার ও অন্যান্য সোশাল নেটওয়ার্কগুলো একই ধরনের নীতিমালা অনুসরণ করে থাকে। কিছু সুপরিচিত শব্দ আপনি প্রায়ই শুনে আশাকরি।

understand terms of service copyright

  • নন-এক্সক্লুসিভ: আপনি কিছু ফি'র বিনিময়ে কাউকে আপনার ফটো প্রকাশের লাইসেন্স দিতে পারেন। তাই আপনার কাছে যদি আপনার হাই-রেজ্যুলেশনবিশিষ্ট কোনো ফটো থেকে থাকে যা আপনি অনলাইনে বিক্রি করতে চান সেক্ষেত্রে সেটা নন-এক্সক্লুসিভ লাইসেন্স।
  • ট্রান্সফারেবল: এটা সেই ক্ষমতা যা আপনি ফেইসবুককে দিচ্ছেন। আপনি জানেন যে আপনার ফটো ফেইসবুক অন্য কাউকে সহজেই দিতে পারবে। আর আপনি তা স্বীকারও করেছেন। এটা আসলে কপিরাইট মালিকের জন্য বেশ ভয়েরই একটি বিষয়।
  • সাব-লাইসেন্সেবল: এটি তো আরো ভয়ানক। ইন্সটাগ্রাম শুধু আপনার ফটো স্থানান্তরই করতে পারবেন না, অন্য কারো কাছে এর সাব-লাইসেন্সও বিক্রি করতে পারবে।
  • রয়েলিটি-ফ্রি: টুইটার যদি আপনার ফটো বিক্রি করে, তাহলে আপনি টাকা পাবেন। তার মানে হলো আপনি তাদেরকে ফ্রি-রয়েলিটির ক্ষমতা দিয়েছেন।

অন্য কথায় বলতে গেলে সোশাল নেটওয়ার্কগুলোর সকল ক্ষমতা আছে আপনার টেক্সট, ফটো বা ভিডিও দিয়ে অনেক কিছু করার।

ফেইসবুককে থামানোর জন্য কি আপনার কোনো ডিসক্লেইমার প্রকাশ করা উচিত?

না। অরিজিনাল কন্টেন্ট এর জন্য আপনি নিজেই আপনার কপিরাইটের মালিক। সেটা ঠিক আছে। কিন্তু ফেইসবুক তার প্রাপ্ত অধিকার বলে এটা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। কারণ, সে অধিকার আপনিই ফেইসবুককে দিয়েছেন।

এটা একটা চরম ভুল ধারণা ফেইসবুকে নিয়ে। আপনি ফেইসবুকে লিখলেন যে, আপনি ফেইসবুককে আপনার কন্টেন্ট এর উপর কোনো প্রকার ক্ষমতা দিতে রাজী না। এতে আসলে কোনোই লাভ নেই। আপনি ফেইসবুককে আপনার কন্টেন্ট এর অতীত ও ভবিষ্যতের উপর অধিকার দিয়েছেন।

আপনি যখন ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় “Agree”তে চাপ দেন, তার মানে হলো আপনি ফেইসবুককে সেই অধিকারটা দিয়ে দিলেন।  এ বিষয়ে লড়তে হলে আপনার কোনো ফেইসবুক আইনজীবির কাছে যাওয়া প্রয়োজন। সামান্য একটা টিউন দিয়ে এসব দাবি করা কোনোভাবেই বৈধ না।

আমি এখন কী করবো?

আসলে বিষয়টা শুনতে ভয়ঙ্কর। কিন্তু চিন্তার কোনো কারণ নেই।

worry keep calm

এই বৈধতা না দিলে আসলে আপনি তেমন কিছুই করতে পারবেন না ফেইসবুকে। এটা না দিলে আপনি আপনার ফ্রেন্ডের টিউনে লাইক দেয়ারও অধিকার রাখেন না। আর এই ক্ষমতাবলেই ফেইসবুকে বা টুইটারে বিভিন্ন সংবাদপত্র বা খবর প্রকাশ করা হয়।

সংবাদপত্র বা অন্যান্য মাধ্যমগুলো কি আমার কন্টেন্ট ব্যবহার করতে পারবে?

মজার ব্যাপারটা এখানেই। সংবাদপত্র ও ফটো এজেন্সিগুলোর জন্য টুইটারে ফটো প্রকাশের ক্ষেত্রে একধরনের ল্যান্ডমার্ক কেইস থাকে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়-

মোরেল নামক একজন ফটোগ্রাফার হাইতিতে ভূমিকম্পের ফটো কাভার করছিলেন। কিছু ফটো তার টুইটারে গেল আর কিছু ফটো অনলাইন ছড়িয়ে গেল। এমনকি তাকে ক্রেডিট না দিয়েই। এ এফ পি ও গেটি ইমেজও তার ফটোগুলো প্রকাশ করলো। এমনকি সারা বিশ্বে প্রিন্টও হলো। এ এফ পি ও গেটি ইমেজ-এর বিরুদ্ধে তিনি মামলা করলেন।

morel afp getty case

অবশেষে মামলার রায় মোরেলের পক্ষেই গেল। জানা গেলো যে এ এফ পি এবং গেটি ইমেজ এক জায়গাতেই ভুল করেছিলেন। আর সেটা হলো মোরেলের অনুমতি না নিয়েই সেগুলো প্রকাশ করেছিলেন। এটা কোনো বিষয় না যে এ এফ পি বা গেটি ইমেজ কোথা থেকে ফটোগুলো সংগ্রহ করেছিল।

এক কথায়। অনুমতিটাই হলো মূল চাবিকাঠি। আপনার অরিজিনাল কাজ আপনার অনুমতি ছাড়া যদি বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হয় তাহলে অবশ্যই সেটা দাবি করতে পারেন। এজন্যই দেখে থাকবেন যে রিপোর্টার বা ব্লগাররা আপনার কোনো কিছু প্রকাশ করার আগে আপনার অনুমতি নিতে চায়। শিল্পকর্মের ক্ষেত্রে অবশ্য এ বিষয়ে অন্যরকমও হয়। আর্টিস্ট রিচার্ড প্রিন্স এর মতে, কোর্ট বিবেচনা করে দেখবে যে এটি ঠিক কাজে ব্যবহার হয়েছে কিনা। তবে এটি সাধারণত ঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় না বললেই চলে। সোশাল মিডিয়া, কপিরাইট এই বিষয়গুলো আসলে বর্তমান যুগের খুবই পরিচিত একটি বিষয়।

তবে অধিকাংশ আইনজীবির মতে, সংবাদমাধ্যমগুলোর উচিত প্রথমে অনুমতি নেয়া। নতুবা কপিরাইট মালিক অভিযোগ করলে তারা তা সরিয়ে নিতে বাধ্য।

কপিরাইট কোনো চিন্তার বিষয় নয়

শেষ কথা এই যে, আপনি যখন কোনো ফটো বা ভিডিও আপলোড করে থাকেন, সেটার মালিক আপনিই। চিন্তা করবেন না সোশাল মিডিয়াতে সেটা কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নিশ্চিত হলে অনলাইনেই অভিযোগ করুন। আর যদি কোনো থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান যদি আপনার ফটো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে তাহলে তাদেরকে থামতে বলুন নতুবা কোনো আইনজীবির শরণাপন্ন হোন।

Level 2

আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস