মোটর বাইকিং And ড্রাইভিং A টু Z [পর্ব-০২] :: আরোহন পর্ব ১ম অধ্যায় :: পোশাক পরিচ্ছদ

মোটর বাইকিং And ড্রাইভিং A টু Z

মোটরসাইক্লিস্টদের পোশাক পরিচ্ছদ:

মোটরসাইক্লিস্টদের মধ্যে একটা কথা প্রচলন আছে। সেটা হচ্ছে-‘‘দু’ধরনের মোটরসাইকেল চালক আছেন; একজন ইতিমধ্যে দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন আর অন্যজন দূর্ঘটনার জন্য তৈরী হচ্ছেন।’’ অর্থাৎ বাইক চালাতে গেলে আপনার পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা প্রচুর!! কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারেনা যে তার দূর্ঘটনা ঘটবেনা। ধরা যাক, আপনি বাইক চালাতে এক্সপার্ট- কিন্তু বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাক ড্রাইভারও কি যথেষ্ঠ এক্সপার্ট ? কেউ কেউ একবার পড়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার সাবধান হোন। অনেকে সেই সুযোগই পাননা। সরাসরি পরকালে পাড়ি জমান! আমি চাইনা আপনার দূর্ঘটনা ঘটুক বা বাইক চালানোর ব্যাপারে আতঙ্কিত হয়ে উঠুন। আমি শুধু বলছি, বাইক চালান কিন্তু সবধরনের সাবধানতা অবলম্বন করেই।

মোটর সাইকেল চালানোর আগে আমাদের অবশ্যই প্রয়োজনীয় পোশাক পরিচ্ছদ পরে নেওয়া উচিত। আমাদের দেশে অনেকে লুঙ্গি পরেও মোটরসাইকেল চালান যা শুধু দৃষ্টিকটুই নয়; অত্যন্ত বিপদজনক। মোটর সাইকেল চালানোর জন্য আলাদা পোশাক কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের মত গরম দেশে জ্যাকেট পরে বাইক চালানো সত্যি কষ্টকর! তবুও বাঁচতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পোশাক পরে নেওয়া উচিত। ঘন্টায় মাত্র ২০ কি:মি: গতিতে থাকা অবস্থায় আপনি যদি কোন পিচ ঢালা রাস্তায় আছাড় খান- আক্ষরিক অর্থেই পিচ আপনার চামড়া তুলে নেবে!! অথচ সাধারনত: আমরা কমপক্ষে ঘন্টায় ৪০ কি:মি: থেকে ৭০ কি:মি: গতিতে বাইক চালিয়ে থাকি। এই অবস্থায় পড়লে কি হবে বুঝতেই পারছেন। সুতরাং রিস্ক নেবেন কেন?

হেলমেট

বাইক চালানোর জন্য হেলমেট হচ্ছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্ত্ত। মোটরসাইকেল চালানোর সময় আমাদের মাথাটা ডিমের খোসার মত হয়ে যায়। লক্ষ্য করেছেন কি- চলন্ত অবস্থায় সামান্য একটা পোকায় কত জোরে আঘাত করে? ঐ গতিতে কোন শক্ত জিনিষের সাথে আপনার মাথা বাড়ি খেলে কি হবে আশাকরি বুঝিয়ে দিতে হবেনা। যত কাছেই যাননা কেন-গরম, বিরক্তিকর ইত্যাদির অযুহাত দিয়ে হেলমেট বাদ দেবেননা। হেলমেট শুধু আঘাতই নয়; পোকা,বাতাস,বৃষ্টি,ধুলো,ঠান্ডা ইত্যাদি থেকেও আপনাকে রক্ষা করে।

আদর্শ হেলমেট কোনটি? বাজারে অনেক রকম হেলমেট দেখতে পাওয়া যায়। এখানে ছবির সাথে সাথে বর্ননাও দেওয়া হলো। এখন আপনি বেছে নিন কোনটা আপনার জন্যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয়।


পাশের ছবির হেলমেট গুলোর নাম bowl helmet. এটাকে আপনি ‘‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা’’ ভালো বলতে পারেন। শুধু মাথাটা বাঁচে। কান, মুখ, গলা, ইত্যাদি সুরক্ষিত হয়না।

এটা হাফ হেলমেট। আগেরটার চেয়ে ভাল। চট করে খুলে ফেলা যায়। মাথার সাথে সাথে কানও রক্ষা পায়। বাইকার রাস্তা সহ আশপাশটাও ভালোমত দেখতে পান। ক্রুজার টাইপ মোটর সাইকেল যারা চালান তাদের জন্য আদর্শ।


এটা Open face Helmet বা ৩/৪ হেলমেট বলে। এটি মাথা, মুখ, কান ইত্যাদি বেশ ভালমত বাঁচায়। ছোটখাট কাজ করার জন্য যেমন, খাওয়া, ছবি তোলা ইত্যাদির জন্য না খুললেও চলে।

পাশেরটি full face Helmet সুরক্ষার জন্য এটিই সবচেয়ে আদর্শ হেলমেট। এতে আপনার পুরো মুখটাই বাঁচে। এগুলোর দামও বেশি। অসুবিধা হচ্ছে ছোট খাট কাজের জন্য পুরোটাই খুলতে হয়। এখন অবশ্য front flip helmet ও বেরিয়েছে। দেখতে full face helmet এর মতই; তবে প্রয়োজনে উপরের অংশটা খোলা যায়। তবে আমার মনে হয়না সেগুলো খুব নিরাপদ! কারন আঘাত লাগার সময় উপরের অংশ খুলেও যেতে পারে।

হেলমেট সম্পর্কে জানলেন। এখন প্রয়োজনমত অবশ্যই একটা কিনে ফেলুন। কেনার আগে dot/snell এর অনুমোদন আছে কিনা দেখে নিন-(না থাকলে বিরাট অসুবিধা তা নয়)। দোকানেই হেলমেটটি পরে দেখুন সামনের প্লাস্টিকটি যথেষ্ঠ পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন কিনা? অবশ্যই স্বচ্ছ প্লাস্টিক কিনা দেখে নেবেন। নইলে বাইক চালাতে অসুবিধা। লক্ষ্য রাখুন ভিসরটি যেন স্ক্র্যাচ প্রুফ হয়। নইলে রাতে বেশ সমস্যা হবে।

রাইডিং গ্লাভ্স

বাইক চালানোর রাইডিং গ্লাভ্স আরেকটি প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট। পড়ে যাওয়ার সময় আমরা স্বভাবত:ই হাত ব্যবহার করে পতন আটকানোর চেষ্টা করি। আমি নিজেই যখন প্রথম মোটরসাইকেল কিনেছিলাম তখন একটা এ্যাকসিডেন্টে আমার বাম হাত ভেঙ্গে যায়! মার্শাল আর্টের ব্রেকফল ও কাজে লাগানোর সুযোগ পাইনি। বাসায় রাইডিং গ্লাভস ছিল; কিন্তু পরা হয়নি। ফলশ্রুতিতে একগাদা ছোট ছোট পাথর ও ইট তালুর মধ্যে ঢুকে যায়। সেগুলো হাসপাতালে যখন বের করছিল তখন বুঝেছিলাম গ্লাভ্স না পরার শাস্তি। এত দ্রুত সব ঘটে যায় যে আপনি ইচ্ছেমত আছাড় খাবেন তার উপায় নেই। তাই অবশ্যই রাইডিং গ্লাভস পরবেন। রাইডিং গ্লাভ্স চামড়ার হলে ভালো হয়। দেখতে নিচে দেওয়া গ্লাভসের ছবির মত যেন হয়। তবে গ্লাভস এমন হবে যাতে আপনি সহজেই ব্রেক, ক্লাচ চাপতে পারেন।

জুতো

জুতো অবশ্যই পরবেন। বুট টাইপের জুতো হলে খুবই ভালো; নইলে কমপক্ষে চামড়ার জুতো পরুন। (সাবধান-গ্যাস পাইপ বা সাইলেন্সার প্রচন্ড গরম থাকে। সেখানে কোন ভাবে খালি পা ছুঁয়ে ফেললে আর রক্ষে থাকবেনা।) কেড্স এখানে খুব একটা কাজে আসবেনা। তবে স্যান্ডেল পরার চেয়ে ভালো।

পোষাক

উজ্জ্বল রঙ যেমন হলুদ, কমলা, সাদা রঙের পোশাক পরুন যাতে বেশ দুর থেকেই অন্যান্য যানবাহনের ড্রাইভার আপনাকে দেখতে পায়। শীত হলে জ্যাকেট পরুন। গরমে ফুলহাতা মোটা জিন্স জাতীয় শার্ট পরুন। সব ঋতুর জন্যেই জিন্স বেশ আরাম দায়ক। এটা ছিলে যাওয়া থেকে অন্যান্য কাপড়ের থেকে বেশি সুরক্ষা দেয়। সুতরাং জিন্স এর পোশাক ব্যবহার করা ভালো। তবে জিন্স সুরক্ষার জন্য পারফেক্ট বলা যাবেনা-অন্যান্য কাপড়ের চেয়ে ভাল; এ’টুকু বলা যায়। সবচেয়ে ভাল লেদার প্যান্ট এবং লেদার জ্যাকেট। কিন্তু এগুলোর দাম বেশী; আর গরমে পরা অসম্ভব।

Level 2

আমি মুহাম্মদুল্লাহ চৌধুরী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 19 টি টিউন ও 96 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

এক্সপ্লোরার......


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

অনেক নতুন কিছু জানলাম। সামনে মোটরসাইকেল কেনার ইচ্ছা আছে। এই টিউন কাজে লাগবে।
দোয়া করবেন। 🙂

fine,many many thanks.

    আপনাকেও থ্যান্কস। আমার মোটর সাইকেল সম্পর্কে অন্যান্য লেখা গুলো পড়বেন আশাকরি।

@ হাসান ভাই। অবশ্যই দোয়া করবো। আমার মোটর সাইকেল সম্পর্কে অন্যান্য লেখা গুলো পড়বেন আশাকরি।

কথায় ছিলেন ভাই এতদিন???? 🙁
খুব সুন্দর লিখেছেন !
অসাধারন!!! 😀 😉

কোথায় ছিলেন ভাই এতদিন???? 🙁
খুব সুন্দর লিখেছেন !
অসাধারন!!! 😀 😉

Level 0

ভাই মন থেকে বলছি,মনে মনে আপনাকে খুজতেচিলাম।এই রকম টিউন- ই তো চাই! টিউনারকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আর মোটর সাইকেল কিনছি, যেমনে প্রতি পর্বে অ্যাকসিডেন্ট এর কথা কইতাছেন, আমি তো শ্যাষষষষষষশ!! 🙁 🙁

মুহাম্মদুল্লাহ ভাই, plz contact with me..need to talk to u..suvro> 01914881547

মুহাম্মদুল্লাহ ভাই, আমি হোন্ডা চালানো শিখবো ভাবছি। আপনার কাছ থেকে হোন্ডা চালানো শিখতে পারলে মনে হয় পারফেক্ট ড্রাইভিং করতে পারতাম।